রবিবার, ৩১ মে, ২০১৫

মধ্য রাতে

মধ্য রাতে
লেখিকাঃ মাধবি লতা

ঘুটঘুটে অন্ধকার অমাবস্যার রাত। দু
হাত দূরত্বের কাউকে ও যেন দেখা
যাচ্ছে না।
খুব দ্রুত গতিতে পথ চলছে অনিক,
সাথে মোবাইলের মৃদু টর্চের আলো।
হঠাৎ শন শন করে একটু কেমন গরম
বাতাস যেন অনিকের গায়ে
লেগে গেল। কিছুক্ষণের জন্য সে একটু
থেমে জিনিস টা কী তা বুঝার
চেষ্টা করছিল। না, কোন কিছুর আর
হদিস মিললো না। তাই সে আবার
হাঁটা শুরু করলো তার নতুন মেসের
দিকে।
দুদিন হলো অনিক এ মেসে উঠেছে।
যাইহোক মেসে ফিরলো অনিক।
যথারীতি সে তার পড়া শেষ করে
খেয়ে এসে ঘুমাতে গেল।
ঘুমে যখনই তার চোখটা বুঝে এলো
ঠিক তখনই সে একটা চাপা আর্তনাদ
শুনতে পেল। আবার কখনো ফুঁপিয়ে
ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ পাচ্ছে।
অনিক ঘড়িতে সময় দেখলো, সময় তখন
মধ্য রাত। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো
ঘরের ফ্যানটি থেকে কেমন যেন মট
মট আওয়াজ আসছে, মনে হচ্ছে তার
উপরে এখনই পরে যাবে। লাফ দিয়ে
বিছানা থেকে নেমে গেল অনিক ।
হঠাৎ তার চোখ গেল দরজার দিকে,
দেখলো রুমের দরজা খোলা, সে
ভাবলো হয়তো ঘুমের ঘোরে সে
দরজা লাগাতে ভুলে গেছে। অনিক
দরজা লাগিয়ে যেই পাশ ফিরলো
তখনই দেখলো প্রায় তার বয়সি এক
ছেলে তার বিছানায় বসে আছে।
অনিক ছেলেটিকে জিজ্ঞাসা
করলো -
-কে তুমি? এ মধ্যরাতে এখানে
কিভাবে এলে?
- আমি নিরব। আসলে আমি আগে এ
রুমেই থাকতাম। একটা দরকারে
তোমার কাছে এসেছি।
- বলো, কি দরকার?
- আসলে আমি একটা গোপন কথা
জানি, তা তোমাকে জানাতে
চাই এবং তোমার থেকে কিছু
সাহায্য চাই।
- আচ্ছা, বলো।
- এ মেসে একটি ছেলে থাকতো,
সে ক্লাসের সবচেয়ে ভাল ছাত্র
ছিল। তাকে সব টিচারেরা খুব পছন্দ
করতো এবং সে সবসময় টপ রেজাল্ট
করতো। কিন্তু তার বন্ধুরা সবাই
তাকে খুব হিংসা করতো। তার জন্যই
তার বন্ধুরা কখনোই টপ রেজাল্ট
করতে পারতো না। তাই ছেলেটির
বন্ধুরা একদিন প্ল্যান করে এই মেসে
এসে ছেলেটাকে খুন করে তার
লাশটাকে তোমার খাটের নিচে
মাটি খুড়ে পুতে রাখে।তারপর
ছেলেটির পরিবার থেকে পুলিশি
কেস হলেও পুলিশেরা ছেলেটির
লাশ কোথাও না পেয়ে নিঁখোজ
হিসাবে কেস ফাইল করে।
- এটা কতদিন আগের ঘটনা?
- এই তো মাস খানেক হলো। তুমি
পুলিশে খবর দিয়ে লাশটি উদ্ধারের
চেষ্টা করো এবং ছেলেটির
বন্ধুদের ধরিয়ে দাও।
আর আমি এখন যাচ্ছি।
অনিক দরজা খুলে দিল। দেখতে
দেখতেই চোখের পলকেই অনেক দূূরে
মিলিয়ে গেল নিরব। পরেরদিন
অনিক পুলিশে খবর দিল এবং লাশ
খুঁজার চেষ্টা করার জন্য অনুরোধ
করলো।
পুলিশের লোকেরা অনিকের রুমের
বেডের নিচে মাটি খুড়ে পঁচা গলা
কিছু মাংস সহ একটি কঙ্কাল উদ্ধার
করে। অনিক লাশটার দিকে
তাকাতেই পারছিল না, তবে
লাশের সাথে একটি ছেড়া শার্ট
ছিল। এই শার্টটি অনিকের খুব
পরিচিত লাগলো। তার মনে হলো
যে, সে যেন কোথায় এ শার্টটি
দেখেছে।তাছাড়া অনিক শুনলো
যে, মৃত্যু ছেলেটির নাম ও নিরব।
বেশ কয়েকদিন কেটে গেল,
ছেলেটির বন্ধুরা প্রায় সবাই ধরা
পড়লো।
অনিক সেই মেস থেকে অন্য মেসে
চলে গেছে। আর কোন সমস্যা হয়নি
তার সাথে।
আজ রাতেও যথারীতি পড়া ও
খাবার শেষ করে ঘুমাতে গেল
অনিক।
মধ্য রাতে আবার হঠাৎ ধপাস করে
দরজা খুলে যাওয়ার শব্দে ঘুম
ভেঙ্গে গেল অনিকের। তাকিয়ে
দেখে সেই ছেলেটি যে কিছুদিন
আগে এমনি এক মধ্য রাতে এসেছিল।
- তুমি আবার?
- তোমাকে ধন্যবাদ দিতে এলাম।
তোমার ঋন শোধ করার মতন না
- না, ধন্যবাদ পাওয়ার মত কিছু
করিনি।
অনিক এবার নিশ্চিত হলো, এ
ছেলের পড়নে যে শার্ট , একিরকম
শার্ট ছিল যেই পঁচা গলা লাশটির
সাথে। তাহলে কি এই সেই ছেলে!!
আকস্মিকভাবে অনিকের চোখ
পড়লো ড্রেসিং টেবিলের আয়নায়,
সেখানে তার প্রতিচ্ছবি আছে
কিন্তু নিরবের কোন প্রতিচ্ছবি
আসছে না। অনিক আবার নিরবের
দিকে সরাসরি তাকালো দেখলো
অনিক ঠিকই অাছে। কিন্তু আয়নায়
কেন আসছে না?? তবে কি সে ঐ
ছেলেটিরই আত্না????

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।