রবিবার, ৩১ মে, ২০১৫

মধ্য রাতে

মধ্য রাতে
লেখিকাঃ মাধবি লতা

ঘুটঘুটে অন্ধকার অমাবস্যার রাত। দু
হাত দূরত্বের কাউকে ও যেন দেখা
যাচ্ছে না।
খুব দ্রুত গতিতে পথ চলছে অনিক,
সাথে মোবাইলের মৃদু টর্চের আলো।
হঠাৎ শন শন করে একটু কেমন গরম
বাতাস যেন অনিকের গায়ে
লেগে গেল। কিছুক্ষণের জন্য সে একটু
থেমে জিনিস টা কী তা বুঝার
চেষ্টা করছিল। না, কোন কিছুর আর
হদিস মিললো না। তাই সে আবার
হাঁটা শুরু করলো তার নতুন মেসের
দিকে।
দুদিন হলো অনিক এ মেসে উঠেছে।
যাইহোক মেসে ফিরলো অনিক।
যথারীতি সে তার পড়া শেষ করে
খেয়ে এসে ঘুমাতে গেল।
ঘুমে যখনই তার চোখটা বুঝে এলো
ঠিক তখনই সে একটা চাপা আর্তনাদ
শুনতে পেল। আবার কখনো ফুঁপিয়ে
ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ পাচ্ছে।
অনিক ঘড়িতে সময় দেখলো, সময় তখন
মধ্য রাত। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো
ঘরের ফ্যানটি থেকে কেমন যেন মট
মট আওয়াজ আসছে, মনে হচ্ছে তার
উপরে এখনই পরে যাবে। লাফ দিয়ে
বিছানা থেকে নেমে গেল অনিক ।
হঠাৎ তার চোখ গেল দরজার দিকে,
দেখলো রুমের দরজা খোলা, সে
ভাবলো হয়তো ঘুমের ঘোরে সে
দরজা লাগাতে ভুলে গেছে। অনিক
দরজা লাগিয়ে যেই পাশ ফিরলো
তখনই দেখলো প্রায় তার বয়সি এক
ছেলে তার বিছানায় বসে আছে।
অনিক ছেলেটিকে জিজ্ঞাসা
করলো -
-কে তুমি? এ মধ্যরাতে এখানে
কিভাবে এলে?
- আমি নিরব। আসলে আমি আগে এ
রুমেই থাকতাম। একটা দরকারে
তোমার কাছে এসেছি।
- বলো, কি দরকার?
- আসলে আমি একটা গোপন কথা
জানি, তা তোমাকে জানাতে
চাই এবং তোমার থেকে কিছু
সাহায্য চাই।
- আচ্ছা, বলো।
- এ মেসে একটি ছেলে থাকতো,
সে ক্লাসের সবচেয়ে ভাল ছাত্র
ছিল। তাকে সব টিচারেরা খুব পছন্দ
করতো এবং সে সবসময় টপ রেজাল্ট
করতো। কিন্তু তার বন্ধুরা সবাই
তাকে খুব হিংসা করতো। তার জন্যই
তার বন্ধুরা কখনোই টপ রেজাল্ট
করতে পারতো না। তাই ছেলেটির
বন্ধুরা একদিন প্ল্যান করে এই মেসে
এসে ছেলেটাকে খুন করে তার
লাশটাকে তোমার খাটের নিচে
মাটি খুড়ে পুতে রাখে।তারপর
ছেলেটির পরিবার থেকে পুলিশি
কেস হলেও পুলিশেরা ছেলেটির
লাশ কোথাও না পেয়ে নিঁখোজ
হিসাবে কেস ফাইল করে।
- এটা কতদিন আগের ঘটনা?
- এই তো মাস খানেক হলো। তুমি
পুলিশে খবর দিয়ে লাশটি উদ্ধারের
চেষ্টা করো এবং ছেলেটির
বন্ধুদের ধরিয়ে দাও।
আর আমি এখন যাচ্ছি।
অনিক দরজা খুলে দিল। দেখতে
দেখতেই চোখের পলকেই অনেক দূূরে
মিলিয়ে গেল নিরব। পরেরদিন
অনিক পুলিশে খবর দিল এবং লাশ
খুঁজার চেষ্টা করার জন্য অনুরোধ
করলো।
পুলিশের লোকেরা অনিকের রুমের
বেডের নিচে মাটি খুড়ে পঁচা গলা
কিছু মাংস সহ একটি কঙ্কাল উদ্ধার
করে। অনিক লাশটার দিকে
তাকাতেই পারছিল না, তবে
লাশের সাথে একটি ছেড়া শার্ট
ছিল। এই শার্টটি অনিকের খুব
পরিচিত লাগলো। তার মনে হলো
যে, সে যেন কোথায় এ শার্টটি
দেখেছে।তাছাড়া অনিক শুনলো
যে, মৃত্যু ছেলেটির নাম ও নিরব।
বেশ কয়েকদিন কেটে গেল,
ছেলেটির বন্ধুরা প্রায় সবাই ধরা
পড়লো।
অনিক সেই মেস থেকে অন্য মেসে
চলে গেছে। আর কোন সমস্যা হয়নি
তার সাথে।
আজ রাতেও যথারীতি পড়া ও
খাবার শেষ করে ঘুমাতে গেল
অনিক।
মধ্য রাতে আবার হঠাৎ ধপাস করে
দরজা খুলে যাওয়ার শব্দে ঘুম
ভেঙ্গে গেল অনিকের। তাকিয়ে
দেখে সেই ছেলেটি যে কিছুদিন
আগে এমনি এক মধ্য রাতে এসেছিল।
- তুমি আবার?
- তোমাকে ধন্যবাদ দিতে এলাম।
তোমার ঋন শোধ করার মতন না
- না, ধন্যবাদ পাওয়ার মত কিছু
করিনি।
অনিক এবার নিশ্চিত হলো, এ
ছেলের পড়নে যে শার্ট , একিরকম
শার্ট ছিল যেই পঁচা গলা লাশটির
সাথে। তাহলে কি এই সেই ছেলে!!
আকস্মিকভাবে অনিকের চোখ
পড়লো ড্রেসিং টেবিলের আয়নায়,
সেখানে তার প্রতিচ্ছবি আছে
কিন্তু নিরবের কোন প্রতিচ্ছবি
আসছে না। অনিক আবার নিরবের
দিকে সরাসরি তাকালো দেখলো
অনিক ঠিকই অাছে। কিন্তু আয়নায়
কেন আসছে না?? তবে কি সে ঐ
ছেলেটিরই আত্না????

আমি কিন্তু ভিতু নই

                 আমি কিন্তু ভিতু নই
 ইমরান আল আতিক

(সম্পুর্ন কাল্পনিক বাস্তবে কনো মিল নেই শুধুমাত্র দর্শকদের আনন্দ দিতে)

আপনিও জানেন আমিও জানি এই পৃথিবীতে ভুত বলে
কিছুই নেই, তারপরেও আজ আমি আপনাদের সাথে সেদিনের আমার এবং আমার বন্ধুদের সাথে ঘটে যাওয়া একটা কাহিনী তুলে ধরছি। আমাদের বিষয়ে কিছু বলে নেই আমি এবং আমার বন্ধু সিরাজুল ও রনি। আমরা চাটমোহর কলেজে পড়ি, আমরা তিন জনে একে অপরের খুব কাছের বন্ধু।  আমার নামটা আতিক। সব সময় এক সাথে থাকি একি মেসে থাকি এবং একি রুমে।   আমরা চাটমোহর  চৌধুরী পারার আজমেরি (মেসের নাম কাল্পনিক) মেসে থাকতাম ২০১১ সালে।  অনেক রাত পর্যন্ত পড়ার ফাঁকেফাঁকে গল্প করতাম। তো আমরা প্রায় দিনি রাতের মিল মেসে খেতাম না আমাদের চাটমোহরে হৃদয়ের হোটেল নামে একটা হোটেল আছে (আজও আছে সেই হোটেল) সেখানকার খিচুড়ির এতই স্বাদ যে ভুলবার নয় (যদি কখনো চাটমোহরে এসে রাত হয়ে যায় তবে ওই হোটেলের খিচুড়ি খেয়ে আসবেন)। প্রতিদিন তিনজনে কলেজ শেষে দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমাই তো একদিন ঘুমাতে লাগলাম আমার ঘুম শেষ না হতেই মেসের সবাই আমাকে জাগিয়ে দেয় এবং সবাই বলে যে সিরাজুলের ফোন হারিয়ে গেছে, তোর ফোন কই?  আমি চারিদিক দেখলাম আমার ফোন নেই অবশেষ বালিশের নিচে আমার ফোন পাই
অনেক খুজা খুজির পরেও সিরাজুলের ফোন পেলাম না
তিন জনের মন তো অনেক খারাপ
সেদিন তিন জনেই খিচুড়ির কথা ভুলে গেলাম।
সেদিন রাতেই ঘটলো এক ঘটনা,
সেদিন রাতে  সবাই ঘুমাচ্ছিলাম রনিও ঘুমাচ্ছিলো হঠাৎ ও চিৎকার দিয়ে উঠলো, আমরা দুজন জেগে গেলাম এবং অকে বললাম কি হয়েছে (রনি আগে থেকেই ভিতু একটা ছেলে) সে ভয়ে কাপ্তে কাপ্তে বল্লো সে স্বপ্ন দেখেছে যে সিরাজুলের ফোন নিয়ে যাচ্ছে এক মেয়ে তার অনেক লম্বা লম্বা চুল একবার এদিক তাকাইতেছে আবার সামনে হাটছে।
আর বলছে এই যে রনি তুই যদি এই কথা কাউকে বলিস তবে তোর জান বের করে নিবো ।
রনি কাঁদছিল আমি আর সিরাজুল বাকরুদ্ধ হয়ে বসে রইলাম অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন সকাল হবে।
সকাল বেলায় মেসের সবাই কে একত্রে করে বললাম এই এই কথা আমাদের কথা শুনে সবাই বললো আমি আর মেসে থাকবো না বাসায় চলে যাবো যেই কথা সেই কাজ তিন জন বাদে সকালেই যার যার বাসায় সে সে চলে গেলো
দুপুরে স্টার হোটেল থেকে খেয়ে আসার সময় হাজী মেসের সামনে দিয়ে এক মেয়ে দৌড়ে গেলো। তিন জনে পিছু নিলাম মেয়েটার চৌধুরী পারার পিছুনেই এক বিল
সেখানে গিয়েই মেয়েটিকে আর দেখা গেলোনা।  রনি অজ্ঞান হয়ে গেলো
রনির জ্ঞান ফিরলো ৪ টার দিকে রনি বল্লো আমি থাকবো না আমি বাসায় জাবো আমাকে বাসায় রেখে আয়
আমার আগামিকাল পদার্থ বিজ্ঞানে পরিক্ষা ( আমি আর রনি সাইন্স এর ছাত্র আর সিরাজুল ছিলো কমার্স) রনি বল্লো আমি পরিক্ষা দিবো না সিরাজুল তুই আমাকে বাসা তে রেখে আয় ভাই প্লিজ
সিরাজুল আর রনি আমাকে রেখে চলে গেলো।
এখন কি করবো ভাবতেছি আমি কি অন্য মেসে গিয়ে থাকবো আবার ভাবলাম অদের ওখানে গেলে পরা হবে না তাই ঠিক করলাম আমাদের মেসেই থাকবো।
সন্ধার আগেই হোটেল থেকে মুগ্লাই কিনে আনছিলাম রাতে খাইতে
তো পরার টেবিলের উপর মুগ্লাই রেখে পরতে বসছি সন্ধ্যা থেকেই পরতে পরতে রাত ১১ টা বেজে গেসে বুঝতেই পারলাম না. এখন মুগ্লাই খেতে বসব
ঠিক সেই মুহুর্তে এক আওয়াজ ভেসে আসলো আমার কানে
কে জেনো বলছে কি আতিক তুমি গেলে না যে সবাই আমার ভয়ে পালিয়েছে আর তুমি দেখছি পালাওনি আবার মুগ্লাই টাও খাওনি
আমি চারিদিকে তাকালাম কোথাও কিছুই খুজে পেলাম না
অন্য রুম থেকে শব্দ আসছে আতিক আতিক ভাই দরজা খুলোড
আমি হতভম্ব হয়ে চুপ করে রইলাম দেখি শব্দ টা আরো বাড়ছে 
হঠাৎ ছাদের দেয়ালে তাকাতেই চোখ আর সরাতে পারছি না
একি এতো রক্ত কোথা থেকে।
আমার শরির থেকে দেখছি ঘাম ঝরছে
তার কিছুক্ষন পরেই অনুভব করলাম  কে জেনো আমার শরিরের ঘাম মুছে দিতেছে
আর বলছে কি আতিক ভাবছো আমি কে আর কেনই বা এমন হচ্ছে তাই না
আমি সাহস করে বললাম কে তুমি আর কেনো এসব হচ্ছে
সামনে এসে কথা বলো
আমায় পতি উত্তরে বল্লো আমি তোমার সামনে গেলে যে তুমি ভয় পাবে
আমিও উত্তরে বললাম আমি তোমাকে মটেও ভয় পাই না
সে বল্লো তাই নাকি এজন্যি কি তুমি বাসায় গেলে না?
আরো বল্লো জানো তুমি যে আমায় ভয় পাওনি তার জন্য আমি খুবি আনন্দিত। আমি বললাম কেনো
সে আমায় বলছে জানো
এই মেসে থেকে আমি কত ছাত্রকে ভয়ে বারি পাঠিয়েছি আর কত ছাত্রর জান বের করে নিয়েছি?
বললাম না
সে বলছে আমি তোমাদের পাসের গ্রামের এক সাধারন ঘরের মেয়ে বাবার আশা ছিলো ডাক্তার বানাবে তাই তোমাদের কলেজে ভর্তি হলাম দিন কাল ভালোই জেতেছিলো আর আমি বাসা থেকেই আসতাম বলে রাস্তায় অনেকেই আমার দিকে নজর দিতো এক দিন এখানকার এক ছেলের প্রেমে পরে জাই কিন্তু সে আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে আমার সর্বনাশ করেই শান্ত হয়নি অর অনান্য বন্ধুদের নিয়ে আমার উপর অত্যাচার চালায় তাতেও তাদের তৃপ্তি মিটেনি অবশেষে আমাকে ওই বিলের মাঝখানে গলাটিপে মেরে মাটি চাপা দিয়ে দেয়। তার পর থেকেই আমি এমন হয়ে যাই আমি অদের সবাইকে মেরে ফেলি।
আমি বললাম আচ্ছা তুমি অন্যদের ভয় দেখাও কেনো সে বল্লো তারা যেনো আমার মত অন্য মেয়েদের এমন না করে
তুমি জানো না তোমরা তিন জন মেসে না থাকায় অরা মেয়ে নিয়ে এসে ফুর্তি করে।
আর এমন টা অনেকেই করত তাই আমি অদেরকেও শাস্তি দেই
আমি বললাম তো আমাকেও মারবে নাকি
সে বল্লো তোমাকে মারার হলে অনেক আগেই মেরে ফেলতাম
বললাম তাই নাকি।
সে বলল রনিকে স্বপ্ন দেখিয়েছি কারন অনেক বছর যাবৎ একাকি রয়েছি কারো সাথে কথা বলতে পারি না যদি কনো সাহসি ছেলে একাকি থাকে তবে তার সাথে সারা রাত কথা বলবো
তো নিজেকে হিরো ভেবে কথা বলতে লাগ্লাম
কখন যে সকাল হয়ে গেছে বুঝতেই পারলাম না।  এদিকে মেসের খালা এসে ডাকছে কাছে গেলাম বললাম কি হয়েছে
খালা বলল যে অই বিলের মাঝে এক মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে
অনেক লোকের ভির  আমিও গেলাম
আমি সেখানে যেতেই কোথা থেকে যেনো ঝর উঠে আসলো
আর মৃত দেহ দারিয়ে পরেছে সবাই দেখে দৌড়াতে লাগ্লো কেউ সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পরে রইলো
আমার রাতের কথা মনে পরে গেলো
আমি বললাম এসব কি হচ্ছে
মেয়েটি আমার দিকে এগিয়ে আসছে আমার সামনে দারিয়ে বলছে আজ থেকে আর আমার সন্ধান কেউ পাবে না এ জন্যই এসব হচ্ছে আর কিছুক্ষন পরেই আমি চলে যাবো পৃথিবীসহ ছেরে
ভালো থেকো আতিক আর তোমার বন্ধুরা।
কিছুক্ষন পরেই সব শান্ত হয়ে গেলো
সবাই আমার কাছে এগিয়ে এসে বল্লো কি কাহিনী
আমি সবাইকে বলে দিলাম রাতের গল্প টা ।

বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যা

 বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যা
   লেখকঃ ইমরান আল আতিক

(সম্পুর্ন কাল্পপনিক বাস্তবে কনো মিল নেই, ভয় পেলে আমি কিছু জানি না)
বৃস্টি তে ভিজতে কে না চায় ?
হ্যা সবাই চায় বৃষ্টিতে ভিজতে,, 
আর যদি আপনার পাশে কনো এক ছেলে/মেয়ে এক সাথে হাতে হাত রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টিপাত মুহুর্তে ভিজছেন কেমন অনুভুতি হবে?
এখন বৃষ্টি পরছে তাই আমার সাথে ঘটে যাওয়া সেদিনের কথা মনে পরে গেলো,,  তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম আমার সাথে ঘটে যাওয়া সেদিনের কাহিনী।
সেদিন ছিলো রবি বার, 
আসে পাসের ১০/১২ টা গ্রামের মানুষ মির্জাপুর হাট নামের যায়গা সবাই চিনেন,
তো একদিন আমাদের পুকুর থেকে মাছ মেরে সেই হাটে বিক্রি করতে গেলাম,  যদিও আমি এসব কখনো করিনি আমার সাথে আমার কাকু গিয়েছিলো,
হাটে মাছ নিয়ে যেতে যেতে দুপুর ২ টা বেজে গেছে,,,  আমাদের বারি থেকে সেখানে যেতে পায়ে হাটতে হয় ঘন্টা খানেক সময়। হাটে গিয়েই মাছ বেচতে শুরু করলাম (আমার জিবনে হাটে যাওয়া প্রথম)
আমি আর কাকু, দুপুর হয়ে যাওয়ায় কাকু আমাকে এক হোটেলে বসিয়ে দিয়ে বল্লো কাকু তুমি খাও আর খাওয়া হলেই,পাশের মন্দিরের গলি ধরে একটু আগালেই আমাকে দেখতে পাবে (মির্জাপুর হাটের মধ্য মন্দির আছে) খাওয়া শেষ,  কাকু আগেই বিল দিয়ে গেসে,, আমি অই পথ ধরে যাচ্ছি, মন্দিরের সামনে গেলাম যখন তখন দেখলাম  এক টা খুব সুন্দরী মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে,, মনে হচ্ছিলো কত দিনের চেনা,, পাশ থেকে এক কাকু বলছে কিরে বাপ কি দেখছো,,  মন্দির কখনো দেখনি?
বললাম না কাকু দেখেছি কিন্তু অই মেয়েটা কে?
কাকু বলছে কি বলো এই হাটের দিনে মেয়ে পাবে কই? মাথা ঠিক আছে তোমার? 
বললাম অই যে হাসছে আপনার আর আমার কথা শুনে,, 
কাকু বলছে তোমার বাসা কথায় বাপ?
বললাম সেই বরদানগর,,
কাকু বলছে বুঝলাম,, কাকু আর কিছু না বলে আমার মাথায় হাত দিয়ে কি যেনো বির বির করে পড়ে ফু দিয়ে দিলো,, তার পরেই আর আমি সেই মেয়েটিকে দেখতে পেলাম না,,,
তখন বেজে গেছে ৩:৪৫ অচেনা কাকু বলছে তারাতারি বাসায় চলে যেও কেমন,,
বললাম ঠিক আছে,, 
আমি আমার কাকু কে বললাম কাকু কাকু আমি বাসায় চলে যাব, কাকু বলছে মাছ বেচা তো হয়নি,, একা যেতে পারবি?
বললাম হ্যা পারব,, কাকু কে বললাম না মন্দিরের কথা আর অচেনা কাকু তারাতারি বাসায় যেতে বলছে,,
আমি বাসার দিকে রউনা দিলাম তখন ৪:১২ মিনিট,  বাসায় যেতে ১ ঘণ্টি লাগবে,, তারা তারি পা ফেলে চলেছি,,
আমাদের বাসায় যেতে একটা হিন্দুদের শ্মশান ঘাট পরে,, অই শ্মশান ঘাটের কাছে যেতেই বৃষ্টি পরা শুরু হলো,,
কি করবো ভাবছি,,
শ্মশানের ভিতরে একটা ঘর আছে সেখানে গিয়ে উঠলাম,  এদিকে সন্ধ্যা হয়ে আসছে কেউ নেই একা একা দারিয়ে আছি,  কিছুক্ষণ পরে দেখি বৃস্টিতে এক মেয়ে ভিজতেছে,, আমি সেদিকে কিছুক্ষন তাকাতেই,  আমার পিছনে কে যেনো এসে হাজির,  পিছনে তাকাতেই আমি চমকে গেলাম,,
বুকে থুতু দিতে লাগলাম,,
এ যে সেই মেয়েটি,, 
মেয়েটি আমায় বলছে আসো বৃষ্টি তে ভিজি,, আমি বললাম না ভিজব না
মেয়েটি রেগে গিয়ে,,  আমাকে নানান ভাবে ভয় দেখাতে লাগ্লো,, আমি ভয় পাচ্ছিলাম,,
আমার গায়ে হাত দিতেই,  মেয়েটি চিৎকার দিতে দিতে কিছু দূর চলে গেলো,, আমি খুব ভালো করে দেখছিলাম,, দেখি মেয়েটি তার হাত নিজেই খেয়ে ফেলছে,, নিজের কলিজা বের করে ফেলছে,, আর জা পরে দেখলাম, মেয়েটির মাথা  ধর থেকে আলাদা হয়ে গেলো,, মানে গলা কেটে রক্ত বের হতে হতে,,,,,,,
তার পর আমার আর কিছু মনে নেই,
সকালে দেখি আমি বাসায় সুয়ে আছি,,

অতৃপ্ত পরিবার

অতৃপ্ত পরিবার
             আফরোজা আঁখি
রাতুলরা পুরান ঢাকার একটা অত্যন্ত পুরাতন গলির একটা বাসা নতুন ভাড়া নিয়েছে।এখনো আশে পাশের কারো সাথেই পরিচয় হয়নি।বাসা সবকিছু ঠিক ঠাক করার পরে রাতুল এখন কিছুটা অবসরে আছে।তার আবার রাত জাগার অভ্যাস।একটু রাত হলেই ছাদে চলে যায়।তো এই বাড়িতে উঠার পরে প্রথম যেদিন ছাদে উঠল তখন প্রায় ১২টা বাজে।চারপাশে তাকাতে যেয়ে দেখে পাশের বিল্ডিংএর ছাদে একটা মেয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।পাশের বিল্ডিংটা এতো কাছে ছিলো যে একটু চেষ্টা করলেই ঐ ছাদে চলে যাওয়া যাবে।যাই হোক,এতো রাতে রাতুল একা একটা মেয়েকে ছাদে দেখে একটু অবাকই হলো।তবু সাহস করে যেয়ে ডাকদিল,'এই যে শুনছেন।'মেয়েটা কোনো সাড়া দিলো না।বরং যেভাবে দাড়িয়েছিল,সেভাবেই থাকলো।এবার রাতুল আরেকটু জোরে ডাকলো।এবার মেয়েটি তাকালো।চোখের দৃষ্টি কেমন যেন শূণ্য,মৃত মানুষের মতো।
রাতুল বললো,'আপু,আমরা এই বিল্ডিংএ নতুন আসছি।নাম রাতুল।আপনার নাম?'
মেয়েটি আস্তে করে জবাব দিলো,'নিধি'।
রাতুল,'ও,তো আপু আপনি এতো রাতে ছাদে আসছেন কেনো একা একা?'
নিধি,'প্রতিদিনই আসি।ভালো লাগে'।
এভাবে একটু একটু করে সেদিন অনেকক্ষণ গল্প করলো রাতুল।তারপর বাসায় চলে আসলো।
কিণ্তু বাসায় আসার পরেই তার একটা অদ্ভুত অনুভূতি হতে লাগলো।তার মনে হতে লাগলো কেউ মনে হয় তাকে দেখছে।ও যখন খাটের পাশে দাড়াতো তখন ওর মনে হতো কেউ খাটের নিচ থেকে তাকে দেখছে।এক্ষুণি হয়তো তার পা ধরে টেনে তাকে খাটের নিচে নিয়ে যাবে।আবার ওয়াশরুমে গেলে মনে হতো ভেণ্টিলেটর দিয়ে কেউ তাকে দেখছে।এভাবেই তার দিন যেতে লাগলো।আর এদিকে প্রতি রাতেই ছাদে উঠে নিধির সাথে গল্প চলতে থাকলো।
এভাবে চলতে থাকলো রাতুলের দিন।রাতুল একসময় খেয়াল করলো নিধি কখনো হাসে না।ব্যপারটা ওর কাছে অদ্ভুত লাগলো ভাবলো হয়তোবা এটা ওর স্বভাব।তো হঠাৎ একদিন নিধি বললো,'মার্চের ১৫তারিখ আমার জন্মদিন।তুমি এসো।'
রাতুল বললো,'কখন যাবো?'
নিধি বললো,'রাত ১০টার দিকে'।শুনে রাতুল একটু অবাকই হলো।এতো রাতে কেউ দাওয়াত দেয় নাকি।কিণ্তু কিছু বললো না।সেদিন ছিলো ১২ তারিখ।পরের ২দিন রাতুল ছাদে যেয়ে দেখলো নিধি আসেনি।ভাবলো হয়তোবা ব্যস্ত।১৪ তারিখ রাতে রাতুল একটা ভয়ানক স্বপ্ন দেখলো।দেখলো যে ও একটা বদ্ধ ঘরে রয়েছে।সেখানে একটা ফ্যান ঝুলছে।ফ্যানের তিনটা পাখার সাথে তিনটা বিকৃত লাশ ঝুলছে।আর সেখান থেকে রক্ত গড়িয়ে ওর গায়ে পড়ছে।প্রচণ্ড আতংকে রাতুলের ঘুম ভেংগে গেল।কিণ্তু ব্যপারটাকে শুধু স্বপ্ন ভেবে ও উড়িয়ে দিলো।পরদিন রাতে নিধির জন্মদিনে যাওয়ার জন্য বের হলো।যেহেতু পাশেই বিল্ডিং তাই একেবারে ১০টার দিকেই বের হলো।ওদের বাসায় যেয়ে দরজায় কড়া নাড়ার সাথে সাথে নিধি দরজা খুললো।ঘরে ঢুকে একটু অবাক হলো রাতুল।কারণ কোনো মেহমানই নেই।নিধি রাতুলকে বসতে দিয়ে ভিতরে চলে গেল।একটু পরে ওর বাবা মাকে নিয়ে আসলো।নিধির বাবা মাকে দেখে রাতুল একটু চমকে গেলো।কারণ তিনজনের দৃষ্টি একরকম।
আর কারো মুখেই হাসি নেই।রাতুল বুঝে গেল যে ও কোনো বিপদে পড়তে যাচ্ছে।সাথে সাথে কোনো কথা বলে দরজার দিকে পা বাড়িয়ে দিলো।কিণ্তু ততক্ষণে ওরা তিনজন ওকে ঘিরে ধরেছে।তখন রাতুল সমানে জোরে জোরে দোয়া পড়তে লাগলো।দোয়া শুনে ওরা তিনজন চিৎকার করতে থাকলো আর ওদের গায়ের মাংসগুলো খসে যেতে থাকলো।এরপর রাতুল কোনোমতে দৌড়ে বাহিরে এসে অজ্ঞান হয়ে গেল।পরেরদিন নিজেকে আবিষ্কার করলো হাসপাতালের বেডে।এলাকার লোকেরা ওকে উদ্ধার করে ওখানে ভর্তি করিয়েছে।সুস্থ হয়ে উঠলে ও ঐ বাড়িটাতে যেয়ে দেখে তালা ঝুলছে।পরে আশেপাশের লোকের কাছে শুনলো ১২বছর আগে এখানে একটা পরিবার ছিলো।সেই ১২ বছর আগে ১৫ই মার্চ কারা যেন এসে এদেরকে হত্যা করে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রাখে।তারপর থেকে প্রতি বছর ১৫ই মার্চ এখানে একটা লাশ পাওয়া যায়।রাতুলই ছিলো একমাত্র ব্যক্তি যে বেঁচে ফিরেছিলো।এরপর রাতুল ঐ এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে গিয়েছিলো।

গল্প ঃ সুখ চাঁদের চায়ের দোকান

 সুখ চাঁদের চায়ের দোকান 
                      ইমরান আল আতিক

(সম্পুর্ন কাল্পনিক বাস্তবে গল্পের সাথে কনোরুপ মিল নেই...  কারো সাথে মিলে গেলে দায়ি নই)
আজ যে ঘটনা টা লিখলাম
এই কাহিনী টা ঘটেছে এই তো গত কুরবানি ঈদের পরেই। আমাদের ইয়াং পোলাপানদের আড্ডা খানা চাটমোহর অগ্রণী বাংক এর পিছনে একটু ফাকা জায়গাজমি,পাশেই একটা পুকুর আর তার আসে পাসে সব হিন্দুদের বসবাস।  আর এই ফাকা যায়গা তেই সুখ চাদের চায়ের দোকান অবস্থিত।  সবাই জানে যে হিন্দুদের বসবাস স্থানে নাকি এটা অটা ঘটে থাকে বা আজকাল আমরা লোক মুখে শুনে থাকি। কিন্তু আমরা সবাই তো ইয়াং পোলাপান আমাদের মধ্য এই জায়গায় সব সময় দেখা যেতো তখন - আতিক(আমি নিজে),বকুল ভাই,মিলন,গিয়াস ভাই,শাকিল,সুমন ভাই,সুজন ভাই,মাঝে মধ্য আমাদের পাসের গ্রামের রবিন ভাই,হারুন ভাইও এই জায়গাতে আসতো। আমাদের কাজ কাম নাই তাই সারাটা দিন এই সুখ চাদের চায়ের দোকানে চা খেয়ে সময় কাটাই আর হাসি তামাশার গল্প করি। ঈদ চলে গেছে তার পরেও আমাদের ঈদ কখনো ফুরায় না।
তো একদিন এই জায়গায় উল্লেখিত নামের সবাই আসছে তো সেদিন সবাই ব্রেঞ্চে বসে গল্প করছি তো রবিন আর হারুন ভাই কোথা থেকে যেনো বাইক নিয়ে হাফাতে হাফাতে আসলো আমাদের কাছে. এসেই সুখ চাঁদ কাকাকে বলছে ও কাকা তারাতারি এক মগ পানি দিয়ে যাও কইলজে জায় জায় অবস্থা ।  আমরা সবাই দেখে বললাম কি হয়েছে?  সুখ চাঁদ কাকা পানি নিয়ে এসেই বলতেছে কিরে রবিন কুন ছেরির বারিত থাইক্যা এই ভরা সন্ধাত তারা খায়্যা আইলু।  হারুন ভাই বলতেছে আরে কিছু না কাকা আপনি জান সবার জন্য চা বানান। সুখ চাঁদ কাকা সেখান থেকে চলে গেলো চা বানাতে ।  বকুল ভাই জিজ্ঞেসবাদ করলো  রবিন ভাই তো কথাই বলতে পারছে না।  সুমন ভাই বল্লো কিরে হারুন কি হয়েছে  তখন হারুন ভাই বলতেছে আর ঘামছে আমি বললাম ভাই ঘামতেছেন কেনো?  ভুত দেখছেন নাকি?  বল্লো হ্যা হবে হয়তো
সবাই হাসাহাসি করতে লাগলাম..  ভুতের কথা শুনে শাকিল বাসায় চলে গেলো।  তার পরে রবিন ভাইয়ের অবস্থা দেখে হাসি থামালাম সবাই পরে হারুন ভাই বলতেছে তাইলে শুনো।  বাসা থেকে আমি আর রবিন বাইক নিয়ে এখানে আসার জন্য বের হলাম  আস্তেছি খুব ধিরে ধিরে তখন বিকেল ৫ টা বেজে ১৭ মিনিট বোয়ালমারী এর মাঝ ব্রিজ এ এসে বাইক আর চলে না এখন কি করি টাংকি ঝাকিয়ে দেখি তেল আছে তবুও চলছে না....  প্লাগ টাও ঠিক আছে তবুও   বিদ্যুৎ তৈরি হয় না.... দেখতে দেখতে সন্ধ্যার আজান দিয়ে দিলো আর তখনি প্যাডেল মারতেই বাইক স্টার্ট নিলো আমি রবিন কে বললাম বাইকে উঠতে আর তখনি
এক অজানা অচেনা কি অদ্ভুত বিস্রি চেহারার এক জন এসে বলতেছে এখন বেচে গেলি আল্লাহর নির্দেশে।  কিন্তু তোদের আমি ছারবো না
এটা দেখে দু জন ভয় পেয়ে যাই।  আর রবিনের এই অবস্থা।  বকুল ভাই বল্লো আচ্ছা বুঝলাম তোমাদের আজ বারি জাবার দরকার নেই তোমরা আজ আমাদের বাসাতেই থাকবা।  এই বলে উঠতেই গিয়াস ভাই বলে ফেল্লো কিরে বকুল তোদের বাসায় না রাত্রে কে যেনো ঢিল ছুরে.. বকুল ভাই বলে এমনিতেই দুজন ভয় পেয়েছে আর তুই থামতো।  গিয়াস ভাই আর সুজন ভাই বলতেছে সত্যি কথাই তো  এদিকে সুখ চাঁদ কাকার চা বানানো শেষ কাকা এসে বলতেছে কিরে সবাই যে ভুত নিয়ে মজেছিস আজ তা তুরা কি জানিস (কাকা আমাদের সবার সাথে এভাবেই কথা বলতে ভালোবাসে) এই পুকুর পারের কাহিনী? 
আমরা কেউ শুনতে চাইলাম না এদিকে ফট করে মিলন বলে ফেল্লো বলেন কাকা আমি আর আতিক শুনবো।  আমরা বাধা দিলেও কাকা বলতোই (সে এক রোখা)
কাকা বলতে লাগ্লো তখন ১৯৮০ সাল তোদের অনেকেরেই জন্ম হয়নি তখন থেকে এই পুকুর আর তখন হিন্দুদের এই সকল জায়গা ছিলো কিছু মুসল্লিও ছিলো । একদিন এই পুকুরে সোনার নৌকা ভেসে উঠে।  হিন্দুরা সহ মুসলিম রাও নৌকা ধরতে গেলে সবাইকে তলিয়ে নিয়ে যায়, তার পরের দিন টা তেই সবাই এই এলাকা ছেরে চলে যায়। গল্প বলতে বলতে রাত ১১:৩০ বেজে গেসে কাকা বল্লো তুরা কি থাকবি নাকি আমি বাসায় জাবো কাকা চলে গেলো আর বলে গেলো সবাই চলে যা অনেক রাত হয়েছে।  সুমন ভাই কাকার সাথেই চলে গেলো.. গিয়াস ভাই আর সুজন ভাই এক সাথে চলে গেলো।  বকুল ভাই রবিন ভাই আর হারুন ভাই বকুল ভাইদের বাসায় থাকবে তাই তারাও চলে যাবে.. আমি আর মিলন জিরো পয়েন্ট জেতে হবে আমি বাসা ভারা থাকি তো আমি আর মিলন ভাবতেছি  ইস যদি সোনার নৌকা টা পেতাম
তাই বসে রইলাম বকুল ভাই রবিন.হারুন ভাইকে বাসায় নিয়ে জাবার সময় রুচি হোটেলের সামনে জেতেই দমকা হাওয়া বয়ে যেতে লাগ্লো রবিন ভাই চিৎকার দিয়ে দিলো আমি আর মিলন সেখানে যাবার আগেই পুকুরের মধ্য থেকে কে যেনো বলে উঠলো কিরে তোরা কই জাস তোরা দুজনে না সোনার নৌকা নিবি..  আমি আর মিলন থমকে দারালাম অই দিকে আর কনো সারা শব্দ পেলাম না তাই পুকুর পারে দুজন দারিয়ে রইলাম আর বললাম কোথায় তুমি আর কে তুমি?  ভেবেছো গল্প শুনেই কি আমরা ভয় পেয়েছি?  যদি ভাবো তবে ভুল
আমাদের ভয় দেখাতে পুকুরের অপর প্রান্তে তাকাতেই দেখি এক দল ঘোড়া এদিকে আসছে কিন্তু পা নেই
মিলন কে বললাম মিলন তুই বসেক তো আমি আর মিলন বসে পরলাম আর বললাম.... ওকে দেখি ভয় দেখানো র জন্য আর কি করতে পারো
দেখি আকাশ থেকে বৃষ্টি পরছে পানিতে চারিদিকে খুব ঝর হইতেছে কিন্তু আমাদের গা ভিজছে না।
পরে দেখি এক ড্রাগন এসে আমাদের আগুন দিয়ে পুরিয়ে দেবার চেস্টা করছে কিন্তু সে কিছুই করতে পারছে না....  পুকুরের মধ্য তাকিয়ে দেখি সেই কাকার গল্পের সোনার নৌকা মিলন ধরতে যেতে চাইলে আমি বাধা দিলাম মিলন আমায় ধাক্কা দিলে মিলন কে আমি ঝাপ্টে ধরি 
মিলন আমার বাধা আর পেরুতে পারে না
পুকুর থেকে আমায় উদ্দেশ্য বলে কিরে প্রেম কুমার অকে বাধা দিলি কেনো?  ওকে আস্তে দে তোরে আমি সুন্দরী রমনি দিবো অই যে পাসের পুকুরের ঘাটে স্লান করছে যা দেখে আয়...  আমি আর মিলন বললাম চলতো দেখি
পাসের পুকুরে যেতে এক গলি দিয়ে যেতে হয় সেখানে এক বাগান আর হিন্দুরা পুজা করে । সেই গলি দিয়ে যেতেই দু পাসের ইট জেনো আমাদের আটকিয়ে দিলো এবার একটু ভয় পেলাম সামনে তাকাইলাম দেখি অসংখ্য রমনি স্লান করছে। আমাদের পিছন থেকে আকাশ ছোয়া এক ভয়ংকর মানুষ এসে দারালো আর সামনে দেখি সব কিছু অন্য রকম হয়ে গেছে রাত বেজে গেসে ৩:০৩ মিনিট
দুজনেই এবার সত্যি ভয় পেয়ে গেলাম মিলনের হাতে মেসের কাঠি ছিলো সেটা জালাতেই সব থেমে গেলো পরে সুখ চাদের চায়ের দোকানে আস্তেই আলো নিভে গেলো তখন দেখি আমাদের আসে পাসে সাপ.ব্যাঙ বাঘ ভাল্লুক সিংহ ভয়ংকর দৌত্য আর পুকুরের মাঝ খানে সোনার নৌকা। সবাই জেনো আমাদের কাছে ডাকছে কিন্তু কেউ আমাদের সামনে আস্তে পারছে  না আর এভাবে ভোরের সুর্য্য দেখা দিলো। আমি আর মিলন সেখানেই বসে ছিলাম. ।
সুখ চাঁদ কাকা সকালে এসে বলতেছে কিরে তুরা দুজন কি এখানেই ছিলি নাকি
বল্লাম হ্যা এখানেই ছিলাম
কাকাকে রাতের সব ঘটনা বললাম
কাকা বল্লো আমি আগেই জানতাম এমন কিছু হবে একটা অনেক বছর পর। 
এই ঘরে আসার পর কিছুই হয়নি তাই না?
বললাম এটাই এখন রহস্যময়
কাকা বল্লো সুনেক এই ঘরটা কতা দিয়ে বন্দি করা আচে তাই কিচু হয়নাই
নালি তুরা দুজন আজ স্যাস হয়্যা গেলুনু
এদিকে কিছুক্ষন পর রবিন ভাই আর হারুন ভাই আসলো বললাম কাল কি হইছিলো বল্লো রুচি হটেলের সামনে বাতাশ আর চামচিকার কানে বারি খেয়ে পরে বুঝতে পারলাম তাই বকুল দের বাসায় গিয়ে ঘুমালাম
কিন্তু সেখানে আসলেই টিনের চালের উপর ঢিল ছুরে কে জেনো তিন জন থাকায় আর ভয় পাইনি ।
আমাদের কাহিনী টা বললাম সবাইকে এই সুনে রবিন ভাই আর হারুন ভাইকে সুখ চাদের চায়ের দোকানে বেশ কিছুদিন দেখা জায়নি।

গল্প ঃ সাদা ও কালো পা বিহিন গরু

 সাদা ও কালো পা বিহিন গরু
লেখকঃ ইমরান আল আতিক

আজকে যে কথা টা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি এখন কাহিনী টা লিখার সময় রাত ২ টা বেজে ৫ মিনিট  ।
সেটা হলো
এই তো আমি সবার সাথে গল্প গুজব করেই ঘুমিয়ে পরলাম,,,
হঠাৎ দেড়টা বাজতেই আমার মোবাইল টা ক্রিংক্রিং করে বেজে চলছে,, 
ঘুম ভেঙে গেলো,,,
দেখি পাসের কোথা থেকে যেনো বিড়াল ডাকছে,,  ঘরির কাটা কুট-কিট করে বাজছে আলো জালিয়ে চারিদিকে তাকালাম কোথাও কিছুই নেই,,
জানালার পাসে মনে হলো কিছু একটা আছে,  জানালাটা খুলবো কি ?
খুলেই থ.......  মেরে গেলাম,, 
একি?
দুইটা গরু একটা সাদা আর একটা কালো ষাঁড় লড়াই করছে,,,
কিন্তু অবাক হলাম তাদের পা মাটিতে নেই,,,
আমি ঘেমে গেলাম ভাবলাম কাউকে কি ডাক দিবো?
ভাবলাম না,, 
আমার মত সাহসী ছেলে এমন চিৎকার দিলে সারা গ্রামের সবাই ভয় পেতে থাকবে,,, 
তো লড়াই দেখছি,,,
কিছুক্ষন পরে লড়াই থেমে গেলো আর গরু দুটা চলে গেলো,,,
আমি জানালার পাল্লা হাত দিয়ে টান দিতেই আমার হাত খপ করে ধরে ফেল্লো কে জেনো,, 
কালো রঙের আকাশ ছোয়া এক মানুষ,,
তার পাসেই আবার সাদা রঙের আকাশ ছোয়া মানুষ,, সাদাটা কালো রঙের মানুষ কে আমার হাত টা ছারাতে লাগছে,,  আর বলছে,,  এর হাত তুই ছেরে দে, এই ছেলে তোরি তো উপকার করে চলছে, 
আমি ঠিক বুঝলাম না,  পরে মাথায় বিষয় টা ধরলো যে,,
মিথ্যা আর সত্য কথা নিয়ে ভৌতিক গল্প লিখে অন্যকে ভয় দেখাইতেছি, 
যেটা কিনা আমাদের চির শত্রুরা
মুসলমান দের ধ্বংস করার আর তাদের ইমান হারা করার জন্য এই কাজ গুলি করতো,,,
সাদা লোকটি বল্লো আমরা সবাই জানি এই ছেলে ভিতু নয়,  আর মাথায় বেশ বুদ্ধিবল আছে,,
আজ তোমায় আমি বাচালাম,
আশা করি
তুমিও তোমার প্রিয় নবিজীর উম্মতদের জন্য ভালো কাজ করবে , 
এই বলে সাদা লোকটা কালো লোকটিকে নিয়ে চলে গেলো,, 
এদিকে খেয়াল করলাম,  লারার শব্দ (খের) পাশের চুলা থেকে আসছে,,,  জানালা বন্ধ করে, ফ্যান বন্ধ করে শব্দ শুনলাম,, 
দেখি পাসের বারির ভাবী ধান সিদ্ধ করতে চুলায় আগুন দিতেছে,,,
একটু স্বস্তি ফিরে পেলাম,, আর ভাবতে লাগলাম,  সাদা আর কালো এই দুইটা কে,,,
পরে মনে হলো,,  সাদা টা হলো আমার পথ পদর্শক, আর কালো টা হলো আমাকে খারাপ দিকে নিয়ে যাচ্ছে সব সময় ।।
গল্পঃগ্রামের বট গাছের ভূত।

লেখাঃ সজিব খান আর
---------------------

আমি আজ যে ঘটনাটি বলবো
সেটা আমার খুব ক্লোজ বন্ধুর
সাথে ঘটেছিল| ওর নাম
রফিকুল ইসলাম,ছাইকোলা
গ্রাম,
থানা চাটমোহর ,
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি
মাস।এ সময়টাতে অনেক বেশী
কুয়াশা পড়ে| রফিকুল দের
বাড়ি গ্রামের অনেক
ভেতরে|আর ওদের বাড়ি
যাওয়ার পথে মাঝখানে
একটা বটগাছ পড়ে| কয়েক বছর
আগে ওখানে শত বছরের
পুরানো একটা বটগাছ ছিল|
গাছটা এলাকার লোকজন
কেটে ওখানে আর একটি
বটগাছ লাগিয়ে দিয়েছে|
এটাই এখন অনেক বড় হয়ে
গেছে| যে দিনের ঘটনা, সে
দিন রফিকুল বন্ধুদের সাথে
আড্ডা দিতে বাজারে যায়|
আড্ডা দিতে দিতে রাত
হয়ে যায়| রাত আনুমানিক
১১টা ১০টা হবে| শীতের রাত
হওয়াতে কোন ভ্যান রিক্সা
ছিলনা| আর সে রাতে প্রচুর
কুয়াশা পড়েছিল| তো কোন
রিক্সা না পাওয়াতে আকাশ
হেঁটে বাড়ির পথে রওয়ানা
হল| ওর সাথে কেউ ছিল না|
রফিকুল একাই হাঁটছিল|
শীতের
রাত হওয়ায় রাস্তা একদম
ফাঁকা ছিল| আর গ্রামের
মানুষ তাড়াতারি ঘুমিয়ে
পড়ে| রফিকুল যখন বটগাছটার
ঠিক নিচে আসলো তখন ওর
মনে হল কেউ ওর মুখে টর্চের
আলো ধরেছে আর সেই
আলোটা আসছে বটগাছটার
ওপর থেকে| রফিক ভাবলো
কেউ মজা করার জন্য রাতে
গাছে উঠে বসে আছে|
গাছে কে আছে সেটা
দেখার জন্য ও দাড়িয়ে
পড়লো| আলোটা ধীরে
ধীরে ওর মুখ থেকে গা
বেয়ে নিচে নামতে
লাগলো| ঠিক তখন ওর পায়ে
ঠান্ডা কিছুর স্পর্শ অনুভব করল| ও
ওর পায়ের দিকে তাকাতেই
যা দেখতে পেল তার জন্য ও
প্রস্তুত ছিলনা| একটা মেয়ের
লাশ যার পরনে ছিল সাদা
কাপড় মুখটা খোলা ছিল,
মুখের দিকে তাকাতেই ওর
শরীর ভারী হয়ে গেল| কারন
মেয়েটির মুখ ছিল একদম সাদা
আর ভয়ংকর| মেয়েটা ওর পা
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে
রেখেছে| ও অনেক চেষ্টা
করেও পা ছাড়াতে
পারছেনা| ওর কাছে ওর
শরীরটা মনে হল কয়েক গুন
ভারী হয়ে গেছে| কিছুতেই
পা ছাড়াতে পারছেনা| ও
অনেক সাহসী ছিল| পা
ছাড়াতে ব্যার্থ হয়ে
অনেকক্ষণ ওই অবস্থায়
দাড়িয়ে থাকলো| কোন
কিছুই যেন মাথায় আসছেনা|
হঠাৎ রফিক আয়াতাল
কুরসির কথা মনে হল| সেটা
পড়তে থাকলো| পড়তে পড়তে
রফিকের মনে হল ওর পা টা
একটু ঢিলা লাগছে| কোনমতে
পা টা ছাড়িয়ে এক দৌড়ে
বাড়িতে চলে আসলো| কিন্তু
বাড়িতে গালি শোনার
ভয়ে আজও বাড়ির কাউকে এ
কথা বলেনি| এ ঘটনার
কয়েকদিন শুধু আমাকেই
বলেছিল|| আর আজ আপনাদের
সাথে শেয়ার করলামা||

ঘোর...!


ভূতের গল্পঃ ঘোর..!
কয়েকদিন হলো রাতে ঠিক ঘুম হচ্ছে না।চোখ বন্ধ করলেই কি সব বিভৎস চেহারাগুলি ভেসে উঠে। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে??
দুই তিনবার ডাক্তারের কাছে গেলাম সমস্যাটা নিয়ে। ডাক্তার নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বললেন,
"নীলকান্ত সাহেব, কোথায়? আপনার তো কোনই সমস্যা নেই। আপনি তো একে বারে ফিট আছেন।"
ডাক্তারকে বললাম,"ডাক্তার,তাহলে আমি যেসব দেখি, সেগুলো? "
ডাক্তার হাসতে হাসতে বললেন,"আপনি সম্পুর্ন সুস্থ আছেন মি. নীলকান্ত। ওসব আসলে কিছুই না।আপনি অত্যাধিক ঘোষ্ট স্টোরি পড়েন আর মিস্ট্রিয়াস বই পড়েছেন একসময়,  তাই হয়ত সামান্য হ্যালিসুলেশন।তবে আমার ঠিক তা মনে হয়না। "
ডাক্তারকে বললাম, "তাহলে কি করবো ডাক্তার? "
তিনি হাসতে হাসতে বললেন, "কিচ্ছু করা লাগবে না।বাসায় গিয়ে দিব্যি রেষ্ট নেন কিছুদিন।অথবা সম্ভব হলে সপ্তাহ খানেক কোথাও থেকে ঘুরে আসুন। তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে।"
আর হ্যা, এসব হরর মুভি আর বই পড়া থেকে পারলে একটু দুরে থাকবেন আপাতত। "
ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে বেশ প্রফুল্ল লাগছিল।যাক,তেমন কোন সমস্যা নেই তাহলে।
খুশি মনে মেডিক্যাল থেকে বের হয়ে সোজা সাত মাথায় এসে চা-টা খেলাম।তারপর রাত সাড়ে দশ'টা নাগাদ সি এনজি ধরে বাসায় চলে এলাম। আমার বাসা,আই মিন মেসটা বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের পেছনে,জহুরুলনগর।  এ পাশটা কলেজের উত্তর দিক। মোটামুটি ফাঁকা একটা সুন্দর এলাকা। কলেজের দু'টো হল,"তিতুমীর "ও "মুন" হল আজ প্রায় বছর সাতেক হলো বন্ধ পড়ে আছে।হলের জানালা,দরজা গুলো ভেঙে গেছে,দু'একটা যাও বা জানালা দরজা আছে তাও কোন মত লুলা হয়ে জানালার চৌকাঠের সাথে আটকে রয়েছে কোনমত।
গভীর রাতে ও দিকে তাকালে পোড়া বাড়ির মত লাগে।মনে হয় কখন বা জানালা দিয়ে কোন বিভৎস মুখ বেড়িয়ে আসে! তারপর গলা কাটা কোন মাথা দেয়াল বেয়ে নেমে আসে নীচে,রাস্তায়। আমি পারত পক্ষে রাতের বেলা ওই দিকে তাকাইই না। আজো বাসায় আসার সময় কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা রুমে চলে এসেছি।
যাই হোক,
রুমে এসে দেখি আমার বন্ধু আপেল রুমে নেই।মেইন গেটের দরজার সাথে একটা চিরকুট ঝুলানো রয়েছে। তাতে লিখা,"আজ রাতে আর আসতে পারবো  না।কষ্ট করে আজ রাত একাই থাক।"
নাহ!  একা থাকায় আমার কোন আপত্তি ছিল না।এর আগে মাসের পর মাস একা একা একবাসায় থেকেছি।ওটা কোন সমস্যা ছিল না।কিন্তু সমস্যা টা  হয়েছে ইদানীং।মেসে সবাই থাকতেও একা এক রুমে আজকাল ভয় লাগে! সেখানে পুরো মেসে আজ আমি একা।সম্ভবতই গা টা ছমছম করে উঠলো।
কিছুক্ষন পর বুঝতে পারলাম, আমি ঘামছি। শুধু ঘামছি তা না,শরীরটাও বেশ ভারী ভারী লাগছে। এ কেমন যেন অন্যরকম অনুভুতি।
রাত কেবল এগারোটা। আর রাত এগারোটা এসব এলাকায় কিছুই না।ছেলে-মেয়েরা রাত বারোটা একটা পর্যন্ত রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করে।তবে আমি কেন ভয় পাচ্ছি?
দূর! এটা কোন কথা হলো! নিজের মনে নিজেই বলে উঠলাম।
বাসার অন্যান্য রুমের দরজা জানালা লাগানো আছে কিনা দেখে নিজের রুমে এলাম।নাহ! খুব ক্ষুধা লেগেছে মনে হচ্ছে। কিন্ত আজ ডাক্তারের কাছে যাওয়ায় রান্না-বান্না কিছুই করা হয়নি।ভাবলাম , পাশেই মাহাবুব মামার ছোট্ট হোটেল টা থেকে কিছু খেয়ে আসি। আসার সময় হোটেল খোলাই ছিলো, এখনো থাকার কথা।
#
বাসার গেটে তালা মেরে আমি হোটেলের দিকে হাটা ধরলাম। খুব বেশি দূর না।আমার বাসা থেকে এক মিনিটের পথ।কিন্তু একটা মোড় থাকায় দোকান খোলা আছে কিনা ঠিক বুঝা গেল না। আমি হাটা ধরলাম।
কিন্তু আজ কেন জানি,রাস্তাঘাট সব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ছেলে পেলে কাউকে দেখছি না।ব্যাপার কি? মনে মনে ভাবলাম।হয়ত আজ একটু ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া তাই কেউ বাহিরে নেই।
রাতও অবশ্য কম হয়নি।এখন রাত ১২ টা ১৩ বাজে।তাই স্বাভাবিক ভাবেই রাস্তা সুনসান হওয়ার কথা। এবং তাই হয়েছে।
এদিকে রাস্তার মোড়ের কাছে আসতে না আসতেই রোড লাইট হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেল! দূর কারেন্ট টাও গেল বোধ হয়।
চার পাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে গেছে।কোথায় পা ফেলছি ঠিক বুঝতে পারলাম না।কিছুক্ষন পর চোখ আপনা আপনি আধার সয়ে নিলো।এখন বেশ দেখা যাচ্ছে। মোড় টা পার হতেই দেখলাম, মাহবুবের হোটেল বন্ধ। ধুর! এটা একটা কাম হলো!
এদিকে পেটে যেন রাক্ষস ঢুকেছে।খুব ক্ষুধা পাচ্ছে।যে করেই হোক কিছু খেতেই হবে।তবে এত রাতে আর রান্নার ঝামেলা করতে চাই না।
মাহবুবের দোকানের সামনে দাড়িয়ে ভাবছি,কি করা যায়? কই যাই?
এমন সময় হঠাৎ তিতুমীর হল থেকে একটা চিৎকার শোনা গেল।আমি আসে পাশে কাউকে দেখলাম না। একটু সামনে এগিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলাম ঘটনা কি! যদিও মনের মধ্যে একটা দুরুদুরু ভাব রয়েছে তবুও এগিয়ে গেলাম।
বলা যায় না,এমনও তো হতে পারে যে,কেউ হয়ত কাউকে মারছে কিংবা এরকম কোন কিছু!!
আওয়াজ লক্ষ্য করে সামনের দিকে একটু এগুতেই হলের তিনতলার একটা জানালা ধপাস করে মাটিতে আছড়ে পড়লো। আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম পূর্বের রুমটার দুইটা জানালার মধ্যে একটা জানালা মাটিতে পড়েছে।আর অন্যটা ঝুলছে!
আমি আর ওখানে দেরী করলাম না। তাড়াতাড়ি বাসার দিকে হাটা ধরলাম।আর বাসায় গিয়ে পাশের মেসের কাউকে ডেকে নিয়ে যাবো এইটাই স্থির করলাম।
বলতে গেলে একটু দৌড়েই "নামহীনের" সামনে এলাম।মেসের দরজায় টোকা দেব কিন্তু কোথা থেকে যেন একটা কালো বিড়াল এসে পথ আটকে ধরলো। আমি এগুতে চাইলেই বিড়ালটা আমার দু'পায়ের মধ্যে আসতে চাইছে।কিন্তু আমি জানি,
রাতের বেলায় দু'পায়ের ফাক দিয়ে বিড়াল যাওয়া ভালো লক্ষন না। এতে মৃত্যুও নাকি হয়। এদিকে ভয়ে আমার আত্মারাম খাঁচা ছাড়া। আমি যে চিৎকার করবো  তাও করতে পারছি না।কেউ যেন আমার কন্ঠ রোধ করে রেখেছে। গলা থেকে যে আওয়াজ বের হচ্ছে তা অন্য কেউ তো দূরের কথা  নিজেই শুনতে পাচ্ছি না।
আমার সারা গা থরথর করে কাঁপছে।ঘেমে অস্থির হয়ে যাচ্ছি,যেন এই মাত্র বৃষ্টি হয়েছে আর আমি সেই বৃষ্টিতে ভিজছি।
বিড়ালটা কিছুতে পথ ছাড়ছে না। বরং সুযোগ পেলে যেন আমার কন্ঠনালী ছিড়ে নেয়। বারবার দাঁত বের করে আমার দিকে দৌড়ে আসছে,আর আমি হাত পা ছুড়ে লাত্থি দিচ্ছি।কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
হাত ঘড়িতে ১টা বাজার এলার্ম হলো। আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। প্রচুর পানি তৃষ্ণা লেগেছে। এদিকে এই নির্জন পথে আমি একা অসহায় হয়ে আছি।বুক ফেটে চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু পারছি না।
নিজের জানা যত দোয়া দরুদ ছিল, সব একে একে শেষ করেছি প্রায়।এবার চোখ বন্ধ করে জোড়ে করে আল্লাহকে ডাকলাম!
হে আল্লাহ, আমাকে রক্ষা করো।
তারপর চোখ খুলতেই দেখি সামনে কিছু নেই।
ঘরের এনার্জি বালবটা জ্বলছে। মাথার উপর স্ববেগে সিলিং  ফ্যানটা বনবন করে ঘুরছে।কিন্তু আমি ঘেমে অস্থির।পিঠের নিচে বিছানা ভিজে চুপসে গেছে।আর হার্ট বিট এতটাই দ্রুত ও জোড়ে জোড়ে হচ্ছে যে,নিজেই নিজের হার্ট বিট শুনতে পাচ্ছি।
হাত বাড়িয়ে টেবিলের উপর থেকে জগ ভর্তি পানি ঢকঢক করে গিলে খেলাম।
যাক বাবা, বাঁচলাম!!!
কিন্তু মোড়টা এখনো পাচ্ছি না কেন?
ঘরের দরজা জানালা লাগিয়ে শুয়ে আছি।
Nilkanto( নীলকান্ত)

মৃত মানুষের সাথে সফর

অমীমাংসিত প্রশ্নঃ(মৃত মানুষের যখন সফরসঙ্গী)
(কেউ উত্তর জানলে বলবেন প্লিজ)
আমার সাথে দু'একটা অতি অলৌকিক ঘটনা না ঘটলে আমি কখনোই বিশ্বাস করতাম না যে, জ্বিন-ভূত বলে কিছু আছে।
এখনো মাঝে মাঝে বিশ্বাস করতে চাইনা।আর এই জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগে ভূত-প্রেতে বিশ্বাস একেবারেই বেমানান। তবে এই পৃথীবিতে এখনো অনেক বিষয় আছে যা অমীমাংসিত। যার কোন সদুত্তর কেউ দিতে পারেনি।
আমার জীবনে তেমনি একটা অমীমাংসিত প্রশ্ন রয়ে গেছে।আমি অনেককেই এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছি কিন্তু কোন যুক্তিসংগত উত্তর পাইনি।আজ তাই সবার কাছে আমি সেই প্রশ্নটা আরেকবার করতে চাই।
তার আগে ঘটনাটা বলি,
মাঘ মাসের কনকনে শীতের রাত।আমি সেদিন রাতের ট্রেনে বগুড়া থেকে বাড়ি ফিরছি।রাত দশটা  বিশে রংপুর এক্সপ্রেসে উঠলাম।যেহেতু চাটমোহর স্টেশনে রংপুর এক্সপ্রেস দাড়ায় না তাই বাধ্য হয়ে বড়ালব্রীজের টিকিট কাটতে হলো।  বগুড়া থেকে বড়ালব্রীজ পৌছাতে রাত আড়াইটে বেজে গেলো।
ছোট্ট একটা স্টেশন।দু' একটা দোকান খোলা আছে।দেখে শুনে এক চায়ের দোকানে বসলাম।আর মনে মনে ভাবলাম, আজ আর বাড়ি যাবো না।স্টেশনেই সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। তাই আরাম করে পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে চা-সিগারেট খাচ্ছি। প্রায় আধা ঘন্টা হয়ে গেলো এভাবে বসে থাকতে থাকতে।এদিকে প্রচন্ড ঠান্ডা আর কুয়াশায় চারদিকে ঢেকে আসছে। নিজের অযাচিত বোকামির জন্য নিজের কাছেই রাগ হচ্ছে! 
মনে মনে ভাবলাম,
"দুর! কাল সকালে বের হলেও পারতাম।কি দরকার ছিল অযথা এই রাতে ট্রেনে আসার! না হয় কালকের কাজটা একটু দেরীতেই হত। তবুও তো এই কনকনে শীতের রাতে খোলা আকাশের নীচে এভাবে বসে থাকতে হত না।"
এসব ভাবছিলাম, আর নিজের প্রতি খুব রাগ হচ্ছিলো। কাউকে গাড়ি নিয়ে আসতেও বলিনি।এমনকি কোন আত্মীয়কে ফোন দেব তারও উপায় নেই। ফোনের ব্যাটারি সারা রাস্তায় ফেসবুক চালাতে চালাতেই ডেড হয়ে গেছে।
অগত্য নিরুপায় হয়ে বসে থাকা আর চা সিগারেট খাওয়া ছাড়া উপায় নেই।প্লাটফর্ম এ কিছুক্ষন বসে থেকে সারে তিনটা নাগাদ নীচে বাজারের দিকে নামলাম ঘুরে দেখার জন্য।
কিছুদূর এগুতেই দেখলাম আমার বাড়ির পাশের এক পরিচিত জ্যাঠা এক দোকানে দাঁড়িয়ে পান খাচ্ছে।কাছে যেতেই বলল,
"ক্যা বারে, তুমি এত রাতে কোনে থেইক্যা? "
আমি কাছের একজন মানুষ পেয়ে কিছুটা উচ্ছাসিত হলাম।যাক তাও নিজের একটা মানুষ আছে।
আমি বললাম,"জ্যাঠা,বগুড়া থেকে আসতেছি।আপনি এখানে ক্যা? "
জ্যাঠা বলল,"আমার মেয়ে আর জামাই আসার কথা ছিল এই ট্রেনে।কিন্তু ওরা তো কেউ আসে নাই দেখতেছি। আমার ফোনডাও বাড়িত রাইখ্যে আইছি তাই ফোন দিবের পারি নাই।"
কেবলে দোকানদারের কাছ থেকে ফোন দিয়ে শুনি,ওরা নাকি গাড়ি ফেল করিসে।দেইখসেও রে বা, ক্যাবা কথা হইলো!  যাই হোক,ভালোই হইলো তুমা'ক পায়া।"
"তা তুমি, বাড়ি যাইবে লায়? "
আমি বললাম,"হু যাবো তো,কিন্তু এত রাতে গাড়ি পাবোনে কই? "
জ্যাঠা হাসি মুখে কইলো, "দুর ব্যাটা,আমি একটা সি এন জি লিয়ে আইছি। চল,যাই।"
আমি মোটামুটি আনন্দে আত্মহারা।যাক বাবা,বাঁচা গেলো।
নদী পার হয়ে পশ্চিম পাশের বটগাছের কাছ থেকে সি এন জি তে উঠলাম। বিশ্বাস করবেন না, সি এন জি তে উঠে কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লাম।
এক ঘুম দেয়ার পর কারো ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো।দেখি আমার ওই জ্যাঠা।
আমাকে বলল,"ব্যাটা,তোমারে বাড়ি পায়া গেছি।নামবা? না হয় আজ আমারে বাড়িতে যাই চল?
আমি চোখ খুলে দেখলাম,"আমার বাড়ির সামনের রাস্তায় সি এন জি দাড়িয়ে আছে।আমি জ্যাঠাকে বললাম,
"না,জ্যাঠা,বাড়ি যখন চলে এসছি তখন আর যাবো না।অন্যদিন যাবো।"
জ্যাঠা বলল,"আচ্ছা বাজান,ভালো থাইকো তালি।আর তোমার আব্বা মাকে বইলো আমার বাড়িতে বেড়ায়ে আসতে।"
আমি হ্যা বলে বাড়ির উঠোনে উঠতে শুরু করলাম।ততক্ষণে, সি এন জি মুখ ঘুড়িয়ে বড় রাস্তার দিকে চলা শুরু করেছে।
বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে বুঝলাম  সবাই ঘুমিয়ে আছে। আমি আম্মার ঘরের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে আস্তে আস্তে আম্মাকে ডাকলাম।
আম্মা ঘুম থেকে উঠে এত রাত্রে আমাকে দেখে তো অবাক! 
তারপর নানা প্রশ্ন,কিভাবে আসলাম? কই থেকে আসলাম? কার সাথে আসলাম ইত্যাদি।
আমি ঘরে যেয়ে মাকে সব খুলে বললাম।
হঠাৎ করে ঘরের দেয়াল ঘড়িটা বেজে উঠলো। চারটার ঘন্টা শুনে আমি হকচকিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালাম।
কেবল চারটা বাজলো!
আমি দেয়াল ঘড়িতে ভুল আছে ভেবে হাত ঘড়ির দিকে তাকালাম। চারটা এখনো বাজেনি।কয়েক সেকেন্ড এখনো বাকি আছে!! আমি আরো অবাক হয়ে গেলাম।
এটা কিভাবে সম্ভব? বড়ালব্রীজ থেকে চাটমোহরে আসতেই যেখানে ৪৫ মিনিটের উপরে সময় লাগে,সেখানে আরো সাত-আট কিলো বেশি রাস্তা মাত্র পনেরো মিনিটে কিভাবে আসলাম??
তারপর মা যখন সব কিছু শুনে বুকে দোয়া পড়ে ফু দিয়ে বললেন,"আল্লাহর মাল,আল্লাহই হেফাজত করেন। "তখন একটু অবাক হয়েছিলাম বটে কিন্তু যখন শুনলাম আমি যে জ্যাঠার সাথে এতটা পথ এসেছি,তিনি গত পাঁচ দিন আগে মারা গেছেন তখন স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
কিন্ত কিভাবে আমি এত অল্প সময়ে এতটা পথ এলাম?
আর
একজন মৃত মানুষ আমাকে কেন সাহায্য করলেন?
তা আজো আমার কাছে অমীমাংসিত জিজ্ঞাসা!!
কেউ এর সদুত্তর জানলে অবশ্যই জানাবেন।কৃতজ্ঞ থাকবো ।
Nilkanto( নীলকান্ত

বড় ব্রীজের ভূত


সেবার অনেক দিন পর কুরবানির ঈদের ছুটিতে বাড়ি গেছি।আর বাড়ি যাওয়া মানেই বাড়িতে থাকি বা না থাকি সুকচাঁদ চাচার দোকানে প্রতিদিন যেতেইই হবে। বিশেষ করে আমি আর আমার এক জ্যাঠাতো ভাই "রবিন" প্রতিদিন বিকেলে মোটরসাইকেল নিয়ে চাচার দোকানে চলে আসতাম। তারপর সারা বিকেল,সন্ধ্যা বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর ছোট ভাইদের সাথে গল্প গুজব করে রাত আটটা-ন'টা নাগাদ বাসায় চলে যেতাম। আমার গ্রামের বাড়ি থেকে সুকচাঁদ চাচার চা-ষ্টলে আসা-যাওয়ার পথে একটা বিল পাড়ি দিতে হত। বিলের মাঝখানে এই রাস্তাটা প্রায় দেড়-দুই কিলো। পুরাটাই ফাঁকা,আসে পাশে কোন বসত বাড়ি নাই,যেদিকে তাকানো যায় শুধু বিস্তীর্ণ  ফসলী জমি।আর পাকা রাস্তার দু'পাশে মাঝারি গোছের লাটিম গাছ,কোথাও কোথাও দু একটা শিশু কিংবা বট গাছ সমস্ত রাস্তাটাকে একটা আকর্ষনীয়,দর্শনীয় স্থানে পরিনত করেছে। তবে বিশেষত বর্ষা কালে এই জায়গাটা আরো বেশি সুন্দর হয়ে উঠে। তখন সমস্ত ফসলী জমি পানির নিচে চলে যায়, বিল বর্ষার পানিতে ভরে উঠে। যে দিকে তাকাবেন শুধু পানি আর পানি।পশ্চিমা দিগন্তে অস্তগামী লাল সূর্যটা কিভাবে বিলের পানিতে হারিয়ে যায়, তাই দেখতে বিকেল বেলা ছেলে-বুড়ো সহ সকল বয়সী লোকজন এসে এই খানে ভীর করে।বিলের অপার সৌন্দর্য দু'চোখ ভরে অবলোকন করে।তারপর সন্ধ্যে বাড়ার সাথে সাথে একে একে ফাঁকা হয়ে যায় সব।
আমাদের চলনবিলের লোকজন এই জায়গাকে বলে "মিনি কক্সবাজার"।যাদের কক্সবাজার দেখার সামর্থ্য নেই, তারা এই চলনবিলের মধ্যেই কল্পনায় কক্সবাজার দেখে নেই।
কিন্তু এই অপার সৌন্দর্যের মাঝে কোথাও কোথাও লুকিয়ে আছে অতিপ্রাকৃত কিছু ঘটনা, তা অনেকেই জানেন না। ছোটবেলায় দাদার মুখে এ বিলের মধ্যে ঘটে যাওয়া কিছু ভুতুরে গল্প শুনে এসেছি।কিন্তু নিজের চোখে তা দেখবো কিংবা আরেকটা নতুন ঘটনার স্বাক্ষী হবো, তা কোনদিন ভাবিনি।
যাই হোক, কুরবানির ঈদের বেশ কয়েকদিন পরের ঘটনা এটা। সেদিন আমি আর আমার জ্যাঠাতো ভাই সুকচাঁদ চাচার দোকানে যাওয়ার জন্য বের হলাম।বের হতে হতেই বেশ দেরী হয়ে গেছে।কিন্তু সন্ধ্যা হোক আর যাই হোক চাটমোহরে না এলে আর সুকচাদের দোকানের চা না খেলেই নয়। বাড়ি থেকে রওয়ানা দিয়ে বিলের মধ্যে আসতে আসতে প্রায় বেলা ডুবা ডুবা ভাব।একেবারে ভরা সন্ধ্যে বেলা তখন। হালকা শীত শীত লাগছে,তার মধ্যে দু'ভাই মোটর সাইকেল চালিয়ে আসছি। গাড়ির গতিবেগ ৪০-৫০ কিমি/ঘন্টা।
হঠাৎ
ধানকুনিয়া পার হয়ে যে একটা গোরস্থান আছে সেই গোরস্থানের কাছে আসতেই তীব্র গরম এক বাতাসের হলকা এসে লাগলো। আমি আর রবিন দু'জনেই খুব ভালো ভাবে অনুভব করলাম।
রবিন আমাকে বলল,"চাচাতো ভাই, গাড়ির স্পীড আরেকটু কমা।"
আমি ওর কথার তাৎপর্য বুঝতে পারলাম। সঙ্গে সঙ্গে হালকা ব্রেক করে বিলের প্রথম মোড়টা পার হলাম। ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে এসেছে। আমি রবিনকে বললাম, "কি রে,হঠাৎ এ গরম বাতাস কই থেকে আইলো? "
ও আমতা আমতা করে কিছু বলল না।প্রথম ব্রীজটার কাছে এসে গাড়ি দাড় করালাম।
শরীরটা কেমন যেন ভার ভার লাগছে। হাত পা ঠিক উঠেও উঠতে চাচ্ছে না। আমি রবিনকে বললাম, "তোর কাছে সিগারেট আছে? "
ও কোন কথা না বলে একটা সিগারেট এগিয়ে দিলো। দু'জন পাশাপাশি দাড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছি। হঠাৎ রবিন বলল,
গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়ে দে।আমি নীচে নেমে প্রস্রাব করে আসি।"
মুখে সিগারেট লাগিয়েই ও নীচে নেমে গেলো প্রকৃতির ডাকে।তখন আমি ব্রীজের সাইডে একা দাড়িয়ে। মনের মধ্যে হালকা ভয় কাজ করছে,কিন্তু ঠিক পাত্তা দিচ্ছি না।
বরং সিগারেটে জোড়ে করে দুইটা টান দিয়ে ফেলে দিলাম।
ততক্ষণে রবিন ওর কাজ সেরে উপরে চলে এসেছে। ওর মুখে এখনো সিগারেট। গাড়িতে উঠে বসতেই আমি গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সামনে এগুতে শুরু করলাম।
গাড়ির হেডলাইট এর তীব্র আলোয় পোকা গুলো সাৎ সাৎ করে চোখে মুখে এসে লাগছে।কিন্তু একটু দূরে যেতেই গাড়ির হেডলাইট হঠাৎ ডাউন হয়ে গেলো। কিন্তু ইঞ্জিন যথারীতি চলছে।
আরেকটু সামনেই বড় ব্রীজটা। সামান্য উচু। কিন্তু আমার গাড়িটা কিছুতেই যেন উপরে উঠছে না।মনে হলো, কেউ একজন পেছন থেকে টেনে ধরে আছে। আমি ভাবলাম, উচু জায়গা তাই বোধহয় এমন হচ্ছে। ক্লাস ধরে ঘ্যাট ঘ্যাট গিয়ার কমিয়ে দুই গিয়ারর নিয়ে আসলাম। কিন্তু তবুও যেন ইঞ্জিন ঠিক শক্তি পাচ্ছে না। আমার ডান হাতে পিক আপ ফুল টানা।সাইলেন্সারের পেছন দিয়ে সাদা ধোয়া বের হচ্ছে।কিন্তু গাড়ি যেন এগুতেই চায় না।অনেক কষ্টে গাড়ি বড় ব্রীজটার উপরে উঠে থেমে গেলো।আর ঠিক সঙ্গে সঙ্গে আবারো সেই গরম বাতাস অনুভব করলাম।যেন এখনই আমাদের দু'জনকে গাড়ি সমেত ব্রীজ থেকে নীচে ফেলে দেবে!
হার্ট বিট প্রচন্ড বেড়ে গেছে।সামনে পিছনে তাকিয়ে কোন জনমানুষের চিহ্ন দেখতে পেলাম না। রবিনের মুখের দিকে তাকিয়ে ওর পাংশুটে মুখ দেখে আমি আরো ঘাবরে গেলাম।কি করি আর কি করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।
এদিকে চরম বাতাস হচ্ছে।যেন এই সময়েও কালবৈশাখী ঝড় হচ্ছে বিলের মধ্যে। আমি তো হেডলাইটের আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম, কিন্তু ইঞ্জিন বন্ধ হওয়ার কারন খুজলাম। টাংকি ঝাঁকিয়ে দেখলাম,নাহ,যে তেল আছে তাতে অনায়াসে একশ কিলো রান করা যাবে। স্পার্কিং প্লাগ টান দিয়ে খুললাম। রবিন কে বললাম, মোবাইলের লাইট ধর।
ও গ্যাস ম্যাচ বের করে লাইট ধরলো। নাহ! সব ঠিক আছে। স্পার্কিং চেক করলাম কিন্তু প্লাগে স্পার্ক হচ্ছে না!
আরো বেশিই ঘাবরে গেলাম।এই প্রায় শীতের মধ্যেও দু'জন ঘেমে অস্থির।
শেষ পর্যন্ত সব আশা ছেড়ে দিয়ে রবিনের কাছে আবার সিগারেট চাইলাম। ও সিগারেট বের করে জ্বালানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু এত বাতাসে কিছুতেই মেসলাইট জ্বলছে না।
এদিকে আমার মনে হচ্ছে কেউ যেন বারবার আমার মুখ থেকে সিগারেট টান দিয়ে ফেলে দিতে চাইছে! আর আমিও দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরলাম।
তারপর, বাতাসকে আড়াল করে অনেক কষ্টে সিগারেট টা জ্বালাতে পারি।আর সবচেয়ে আশ্চার্যের বিষয় যখনই সিগারেট টা জ্বলে উঠলো ওমনি চারপাশের উত্তাল হাওয়া শান্ত হয়ে গেলো। বাইকের প্যাডেলে কিক করার সাথে সাথে গাড়ি স্টার্ট, হেডলাইটও একেবারে ফকফকা।
মৃত শরীরে যেন আত্না ফিরে পেলাম দু'জন।
সঙ্গে সঙ্গে গাড়তে উঠে দিলাম টান। গাড়িতে বসার পর আরেকবার ওই গরম বাতাস টা একটা ধাক্কা দিল।আর কানের কাছে কেউ যেন ফিসফিস করে বলল,"তোর মা লাউয়ের পাতায় জাউ বিলাইছিলো দেইখ্যা বাইচ্যা গেলি"।
আমরা দু'ভাই স্পষ্ট সে কথা শুনতে পারলাম। সেই ফিস ফিস আওয়াজ টা।
গাড়ি ছুটিয়ে শুকচাঁদ চাচার দোকানে এসে হাজির হলাম।রবিন আর আমার দু'জনের সারা শরীর ঘেমে একাকার। শুকচাঁদ চাচা রবিনকে দেখেই বলল," বউমার ঘরে চুরি করতে গেছিলে নাকি? "
কি আর বলবো তখন! বিলের মধ্যে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খুলে বললাম সবাইকে। সবাই শুনে এবং আমাদের অবস্থা দেখে তো থ!  বকুল,গিয়াস,ইমরান, মিলন সবাই বলল,ভাই আজ আর বাড়ি যাওয়া লাগবি না।আজ চাটমোহরেই থাকেন।
বকুল বলল,"চল,আমার বাড়িতে আজ থাকিস তোরা।"
কি আর করা! অগত্য সে রাত বকুলের বাসাতেই থাকতে হলো। 
(বকুলের বাসায় সে রাতে যে ঘটনা ঘটেছিলো, তা অন্যদিন বলবো।)
Nilkanto( নীলকান্ত)

প্লানচেট

ভূতের গল্পঃ প্লানচেট

সুমনের মায়ের আত্মাকে যে রাতে  হাজির করেছিলাম, সে রাতের মত ভয়াবহ রাত আমার জীবনে ২য় টি আসে নি। এখনো সে কথা মনে হলে গা শিউরে উঠে।
এই এখনি লোম গুলো খাড়া হয়ে ঊঠেছে। আপনাদের যদি দেখাতে পারতাম, তবে দেখতেন।
নাহ,থাক।আজ সে গল্পটা করবো না। গল্পটা শোনার পর আপনার রাতের ঘুম হারাম হয়ে যেতে পারে! আর সত্যি বলতে কি,আমারো কেমন কেমন যেন লাগছে!  ইচ্ছেই হচ্ছে না সে কথাগুলো আবারো মনে করি! আবার গল্পটা শেষ না করে উঠতেও ইচ্ছে করছে না। যত ভয়ংকরই হোক না কেন, আমার মত তো সবাই এত ভীতু না!
তাহলে শুরু করি,কি বলেন?
১৩ জুন ২০০৯ সাল। তারিখটা আমার স্পষ্ট মনে আছে।আর বার সম্ভবত সেদিন শনিবার ছিল। শনি ও মঙ্গলবার আত্মাদের হাজির করার মোক্ষম দিন। বিশেষ করে এই দুই দিন এরা স্বাধীন ভাবে ঘুরে বেড়ায়।সুযোগ পেলেই লোকজনকে ভয় দেখায় কিংবা বড় কোন অঘটন ঘটায়।
ছোট বেলা থেকেই আমার দাদীর কড়া নিষেধ ছিল শনিবার আর মঙ্গল বারে যেন বেশি রাত বাহিরে না থাকি। তাছাড়া আমার বাড়ির প্রায় পাশেই ছিল কবিরাজ মালু জ্যাঠার বাড়ি।তিনিও বারবার নিষেধ করতেন।আর নিষেধ করার বড় কারন ছিল,আমার ভূতুরে রাশি।
আপনি বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা কিন্তু ভূতুরে রাশির লোকই থাকে আলাদা। হয়ত একই সাথে দু'জন রাতের বেলায় হাটছেন, আপনি অনেক কিছুই দেখছেন কিন্তু আপনার সঙ্গী কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। এমনও হয়।
আর নিজে এই ভুতুরে রাশির হওয়ায় এইসব আজে-বাজে নানা অভিজ্ঞতার সম্মুক্ষীন হতে হয়েছে বহুবার।
আর তাই, বাড়ি থেকে কঠিন নির্দেশ ছিল,
ইলিশ,কই কিংবা পুটি মাছ দিয়ে ভাত  খেয়ে ভর দুপুরে বাহিরে যেন না যাই! অথবা তেল পিঠা খেয়ে পানি না খেয়ে বাহিরে বের হওয়া ছিলো অসম্ভব।  এত কড়াকড়ির পরেও কখনো সখনো মিসটেক হয়ে যেত।
যাই হোক,
সেই ১৩ জুন,শনিবার ছিল এমনই একটা ভয়ঙ্কর রাত। ভয়ঙ্কর মানে শুধু ভয়ংকর নয়,এ এক বিভিষিকাময় কালো রাত।
ঠিক সেদিন থেকে একবছর আগে সুমনের মা, সুমনের বাপের উপর রাগ করে বিষ খেয়ে মরেছিল। সন্ধ্যার সময় বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছিলো আর সারা রাত বাড়ি আসে নাই।পরেরদিন নূরুর পুকুরের পাশের এক জমিতে পরে ছিল মহিলার নীল হয়ে যাওয়া লাশ। আর সেদিন থেকে ঠিক উনত্রিশ দিন পর পিয়াঙ্কার মা নাকি একবার সুমনের মা'কে পুকুর পাড় দিয়ে হেটে যেতে দেখেছিলো!
যা হোক, সুমনের মা বিষ খেয়ে মারা যাবার তেতাল্লিশ দিনের দিন সুমনের বাবা নতুন একটা বউ নিয়ে এলো।  কিন্তু সেই নতুন বউ যে সংসারের শান্তির কাল হয়ে যাবে তা সুমনের বাপ ভাবতেও পারে নি। প্রথম কয়দিন ভালোই চলল। তারপর শুরু হলো নতুন বউয়ের আসল চেহারা প্রদর্শন।  ছোট্ট সুমনটা তখন কেবল ছয়-সাত বছরের।কিন্তু ওই ছোট্ট বাচ্চা ছেলেটার সাথে সৎ মা নানাভাবে অত্যাচার করা শুরু করল। সৎ মায়ের আচরনে ক্ষুব্ধ সুমন অভিমান করে বাড়ির বাহিরে তাল গাছ গুলোর নীচে গিয়ে বসে  থাকত। আর তেমনি একদিন ভর দুপুর বেলা সুমন তাল গাছের নীচে বসে আছে। এমন সময় পশ্চিমের বাগানটার কাছ দিয়ে ওর আপন মা'কে আসতে দেখলো (সুমনের ভাষ্যমতে)। মা'কে দেখে আনন্দে আটখান সুমন কিছুদূর দৌরে গিয়ে মা'কে জড়িয়ে ধরে সৎমা আর বাবার বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ একে একে তুলে ধরল,কিভাবে তার নতুন মা তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে!, কিভাবে বাবা আর আদর করে না, সব সব কথা। ছোট্ট সুমনের কথা শুনে ওর হারিয়ে যাওয়া মা নাকি কেঁদে ফেলল।আর সুমনকে বলেছিল,
"যা বাপ,বাড়ি যা।আমি একটু পরে আসতেছি।"
মহা খুশি সুমন দৌড়ে বাড়িতে এসে সবাইকে ডেকে ডেকে মায়ের সাথে দেখা হওয়ার কথা বলল।কিন্তু কেউই ওর কথায় কর্ণপাত করলো না।
আমার কাছে এসে আমাকে জাপটে ধরে বলল, "ও কাকা, আমি না মা'ক দেখিছি।"
আমি ওকে কাছে বসিয়ে খুটে খুটে সব জিজ্ঞাসা করলাম।কি দেখেছি,কিভাবে দেখেছে,আর কি কি কথা হইছে,সব কিছু।  সাত বছরের ছোট্ট সুমন গটগট করে সব কথা বলে গেল।
আমি ওর কথা পুরোপুরি বিশ্বাস না করলেও একেবারে উড়িয়ে দিলাম না।এমনকি ছোট্ট সুমনকেও কিছু বললাম না।থাক না বেচারা মায়ের ফিরে আসার শান্তনা নিয়ে! তাও যদি ও একটু ভালো থাকে!!
সেদিন সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়েছিলো উৎপাত। সুমনের নতুন মা যেখানেই যাল,সেখানেই ভয় দেখাত।এমনকি একবার তো, কাঁচা পায়খানার মধ্যে উপর করে পুঁতে ফেলতেও চেয়েছিল।ভাগ্যিস সেদিন হুজুরের বউ(বাড়ির পাশের এক মহিলা) পায়খানা ভাঙার শব্দে এগিয়ে এসেছিলো। তা না হলে সেদিনই সৎমায়ের কেল্লা ফতে!!
তারপর থেকে সৎমা একা একা টিউবওয়েল পারেও যেত না।
কিন্তু ক'দিন আর এভাবে থাকা যায়।ভয়ে ভয়ে মহিলাটা বাপের বাড়ি গেল কয়েকদিনের জন্য। আর সেই কয়েকদিন আর কেউই কিছু দেখলো না। সুমনের সৎমা কবিরাজের কাছ থেকে তেল,মাদুলি,পানি পড়া প্রভৃতি নিয়ে কয়েকদিন পর আবার এই বাড়িতে ফিরে এলো।
আর কবিরাজের উপর দৃঢ় ভরসায় সব কিছুকে তুচ্ছ জ্ঞান করা শুরু করলো।কিন্তু কথায় আছে,পিপিলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে!
একদিন এই নব্য পাখনা যুক্ত মহিলারও শেষ দিন চলে এলো।  সুমনের সৎমা এ বাড়িতে এলেও প্রায় মাস খানেক আর কিছুই দেখলেন না।ভাবলেন , সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কিন্তু এক মাস পর থেকে শুরু হলো নতুন উপদ্রব।
রাত-বিরাতে হঠাৎ করে ঘরের বাহিরে গরুর হেটে চলার শব্দ পাওয়া গেল,কখনো খুব কাছ থেকে কেউ যেন ফিসফিস করে কিছু বলছে এমন শোনা যেত।মনে হত,এই জানালার ও পাশে দাঁড়িয়ে দুজন মানুষ নিজেদের মধ্যে আলাপ করছে।
এমনকি সৎমা দু একদিন সে কথা শোনার চেষ্টা করল না,তাও না।জানালার সাথে কান পেতে থাকল কিন্তু কিছু বুঝতে পারলো না।বরং ফিসফিসানি শব্দ শোনা যেত শুধু। এভাবে চলতে চলতে একদিন ঝড়-বাতাস ছাড়াই সৎমায়ের গায়ের উপর আম গাছের ডাল ভেঙে পড়তে পড়তে বেঁচে গেল।
তারপর একদিন দুপুর বেলায় হঠাৎ করে বাড়ির পাশের আম গাছটা কেউ একজন যেন জোরে জোরে ঝাঁকাতে শুরু করলো।সেকি এই ঝাঁকি না সেই ঝাঁকি! না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবেন না।
যা হোক, এত কিছু এক বছর ধরে চলতে থাকলো। 
একদিন বিকেলে সুমন এলো আমার কাছে।এসে বলল, "ও কাকা,কাকা!  মা তো আর আসলো না?"
আমি ওকে কোন উত্তর দিতে পারলাম না।শুধু বললাম, "দূর ব্যাটা! এত ভাবতেছিস ক্যান? মা আসবিনি।"
ভাতিজা সুমন যেন একটু আশা খুঁজে পেল।ওর চোখ মুখ চকচক করে ঊঠলো। তার পর ভো দৌড় দিয়ে বাড়িতে।
সুমন চলে যেতেই আমার একটা চিন্তা মাথায় এলো। 
আচ্ছা,সুমনের মা কি চায়? কেন এমন করছে?
আমি জানি এর উত্তর একমাত্র সুমনের মা'ই দিতে পারে। মাথার মধ্যে দুষ্ট বুদ্ধি চলে এলো। প্লানচেট করবো বলে স্থির করলাম।কিন্তু কিভাবে?
এর আগে একটা কথা বলে রাখি।আমি যখন এস এস সি তে পড়তাম তখন আমার এক বন্ধু সুজন কবিরাজি শিখত। ও আমাকে কয়েকটা কবিরাজির বইও দিয়েছিলো। আর সেই বইয়ের নিয়ম অনুযায়ী সে বয়সে কিছু আমলও করেছি।
স্মশান থেকে পয়সা, হাড় এসব সংগ্রহ করেছিলাম অনেক আগেই। কিন্তু তার ব্যবহার করার সাহস কখনো হয়ে উঠেনি। আর আমার মা একদিন সেই সব কবিরাজীর বই,ডায়রি খুঁজে পেয়ে নিষ্ঠুর ভাবে পুড়িয়ে দিয়েছিলো। আর তা পুড়িয়েছে আমার ভালোর জন্যই।সেই পুড়ানোর হাত থেকে দু একটা বই রক্ষা পায়।তেমনি একটা বই নিয়ে আমি আবার পড়া শুরু করলাম। খুব মনযোগ সহকারে পড়ে পড়ে করনীয় কাজ গুলো লিখে রাখলাম।
প্লানচেট করতে অন্তত আরো দু'জনকে দরকার। যারা আমাকে শক্তি দিতে পারবে। অনেক ভেবে চিন্তে আমার বাল্য বন্ধু সফিকুল আর জাকির কে সব কিছু খুলে বললাম। ওরা রাজি হয়ে গেল।
তারপর কিছু আনুসাঙ্গিক প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন সোয়া সের আতপ চাল,আগরবাতি, শ্মশ্মানের পৌনে দুই টাকা,  মরা মানুষের বিছানার চাদরের টুকরা, সুমনের মায়ের কাপড়ের টুকরা ইত্যাদি খুব গোপনে সংগ্রহ করলাম।
তারপর এলো কাঙ্খিত রাত,
১৩ জুন ২০০৯, শনিবার। ঘুটঘুটে কালো এক রাত।
আমরা ক'জন রাত ১২ টা নাগাদ জাকিরের ঘরে বসলাম।( জাকিরের বাড়িতে সেদিন কেউ ছিলো না।)
সবাই পুত পবিত্র হয়ে মাটিতে প্লানচেট ছক আকালাম।তারপর বইয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী যা যা করতে হবে, সবই করলাম।রাত একটা নাগাদ তিনজন মুখোমুখি বসে আছি।আমি প্লানচেটের জন্য কালি ষষ্ঠী মন্ত্র জপ করলাম, তারপর আত্মামাং মন্ত্র।
মন্ত্র জপ করতে করতে নাকে তীব্র ঝাঁঝালো এক গন্ধ পেলাম।তারপর,
সারা ঘর যেন কাঁপতে থাকলো। আমি আগেই ওদের বলেছিলাম, যেন কেউ ভয় না পায়।ভয় পেলে নির্ঘাত মৃত্যু। কিন্তু তারপরেও আমারই ভয় ভয় লাগতে শুরু করতেই নিজের দূর্বলতা টের পেলাম।সঙ্গে সঙ্গে জাকিরের হাত জোরে করে ধরলাম।আমার অন্যহাত শ্মশ্মানের হাড়টার উপর।
আমি জানি,যতক্ষন আমি দূর্বল না হবো ততক্ষণ আমার কিছুই হবে না।
একটা জোরে করে নিশ্বাস নিয়ে চোখ খুললাম।
একটা ছায়া-মূর্তি দাড়িয়ে আছে আমাদের থেকে একটু তফাতে।
আমি বললাম, "কে? "
ছায়া-মূর্তি হাসতে হাসতে বলল," কিরে, আমাকে চিনতে পারিস নাই? আমি তোর ভাবি।আমাকে ডাকতেই তো এসব করা,তাই না? হা হা হা "
আমি বললাম, "হ্যা।"
সুমনের মা বলল," আমি অনেক সুযোগ খুঁজছিলাম, তোর সাথে দেখা করার কিন্তু সুযোগ পাই নাই।আজ পেলাম।"
আমি বললাম, "ভাবি,আসলে তুমি এমন করলা কেন? আর এখনই বা এমন করতেছো কেন? "
এবার সুমনের মা একটু গর্জন করে উঠে বলল, "ক্যান,তুই জানিস না? কেন আমি এমন করেছিলাম? আর কেন করতেছি? "
"সুমনের বাপ ওই মাগীর জন্য আমার গায়ে হাত তুলিছিলো।তাই রাগ কইরে আমি বিষ খেলাম।আর ওই মাগী আমি মরতে না মরতে আমার ঘরে ঢুকিছে! "
"আমার ছোট্ট সাওয়ালের সাথে কি খারাপ ব্যবহারই না করেছে! আমার ছাওয়ালডা আমার জন্যি কাঁদে।
আমি কিছুতেই ওই মহিলাকে থাকতে দেব না।এমন কি কোন মহিলাকেই না।"
দৃঢ় কন্ঠে সুমনের মা কথাটা বলল।রাগে তার কন্ঠ থেকে সাপের মত ফোস ফোস শব্দ হচ্ছে। আমি কিছু একটা বলতে যাবো,ওমনি সুমনের মা বলল,
"তুই আর এসব করিস না।তোর এসব কিছুই না।আমি এমনিই তোর সাথে দেখা করতে এসেছিলাম,একটা সংবাদ দিতে।"
আমি কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, "কিসের সংবাদ? "
সুমনের মা এবার ফুফাতে ফুফাতে বলল, "আমি আমার ঘরে কাউকে থাকতে দেব না।এমনকি দুনিয়াতে না। "
"ওই মহিলার সময় শেষ হয়ে গেছে।আম ওকে পানির মধ্যে চুবায়া আসিছি। হা হা হা "
"যাহ! আর এসব করিস না কখনো। "
আমি হব্ব-তব্ব লেগে গেলাম।কি? সত্যিই নাকি? ঘর আবার কাঁপতে শুরু করলো।তারপর আর কিছুই নেই। জাকির আর শফিকুল তো ভয়ে চুপসে আছে। শফিকুল কি যেন বলতে চেয়েও বলতে পারলো না!
সুমনদের বাড়ি থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে।কি যেন হয়েছে সেখানে!
কান খাড়া করে শুনার চেষ্টা করলাম।যা শুনতে পেলাম, তারপর তিনজন পরস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে চুপসে গেলাম ঘটনার আকষ্মিকতায়।।এত দ্রুত সব ঘটে গেল ভাবতেই পারছি না তখনও।
Nilkanto( নীলকান্ত)

অদৃশ্য নুপুরের শব্দ

গল্পঃ অদৃশ্য নুপুরের শব্দ
গল্পটা বললে হয়ত কেউ বিশ্বাস করবেন না।কিন্তু এটা বাস্তবে আমার সাথে হয়েছিলো।  শুধু এই একটাই না আরো অনেক অতিপ্রাকৃত ঘটনার জলজ্যান্ত স্বাক্ষী আমি নিজেই। এখন যে গল্পটা বলছি তা ২০০৭ সালের ঘটনা।
তখন আমি চাটমোহর ডিগ্রী কলেজে পড়ি।আমার বাসা কলেজ থেকে খুব বেশি দূরে না হলেও পড়ালেখা ও আত্ম স্বাধীনতার জন্য মেসে থাকতাম।
আমাদের মেসটা ছিল চাটমোহর এর নাড়িকেল পাড়ার প্রায় উত্তর পশ্চিম সীমান্তে। আর আমার মেস থেকে কয়েক কদম হাটলেই চৌধুরী পাড়ার শুরু হয়।
যাই হোক, আমাদের মেসের নাম ছিলো "বকুল ছাত্রাবাস"। মেসের সামনে দিয়ে রাস্তা গেছে। আর রাস্তার ওপাশে ছিল "গুলজার ছাত্রাবাস"। মেসের উত্তর পাশে তখন হাজী সাহেবের ফাঁকা ভিটা।একটা বনের বেড়া আর টিনের চালার ঘর।সেখানে তেমন কেউ থাকত না।মাঝে মাঝে বাড়িওয়ালার ছেলে জামিন ভাই থাকতেন সেখানে। দক্ষিন দিকে একটা পায়ে হাটা রাস্তা চলে গেছে সোজা বিলের মধ্য দিয়ে "শিঙেল" নামক গ্রামে।ওই  রাস্তার সাথেই ছিল সরোয়ার ভাইদের কলার বাগান, আর বাগানের পেছনে একটা বড় পুকুর।শুনেছি,ওই পুকুরের পানি কোনদিন নাকি শুকাতো না।আর আমরা যে তিন-চার বছর ওই মেসে ছিলাম, সে চার বছরে কখনো পানি শুকাতেও দেখিনি।
যাই হোক, মূল প্রসঙ্গে আসি।
আমাদের মেসে আমরা একই ক্লাসের প্রায় বারো জন ছিলাম।সবাই একই ফিগারের আর একই রকম। সারাদিন  চুটিয়ে আড্ডা আর রাতে যে যত পড়তে পারে।
আমারো দিনের চেয়ে রাত জেগে পড়ার প্রতি বেশি ঝোক ছিলো। দেখা যেত কোন কোন দিন পড়তে পড়তে রাত তিনটে চারটে বেজে যেত।আর আমি যতক্ষন জেগে থাকতাম,ততক্ষন আর কেউ জেগে থাকত না।
আর এই রাত জাগার কারনেই আমি সেই অদৃশ্য নুপুরের আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলাম।
সেদিন  ছিল ডিসেম্বরের কনকনে শীতের রাত। আমি দরজা জানালা লাগিয়ে ঘরে বসে পড়ছি। আমার ঘরটা ছিলো দক্ষিন পাশের রাস্তাটার সাথেই।যে রাস্তাটা বিলের মধ্য দিয়ে দূরের একটা গ্রামে চলে গেছে।আমার ঘরের একটা জানালাও ছিল সেদিকে।কিন্তু শীতের রাত তাই সব দরজা জানালা লাগিয়ে কম্বল গায়ে দিয়ে পড়ছিলাম সেদিন। শীতের দিনে রাত যেন খুব তাড়াতাড়িই গভীর হয়ে যায়।আমার বন্ধুরা অনেকেই দশটা না বাজতেই লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়েছে। কিন্তু প্রতিদিনের অভ্যেস বশত আমার ঘুমাতে অনেক দেরি হয়। আমি বই পড়ছি।পড়তে পড়তে কেবলই তন্দ্রা মত এসেছি,ওমনি জানালায় মৃদু দুইটা টোকা পড়লো।
ছ্যাৎ করে চমকে উঠলাম।টেবিল ঘরিটার দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ১২:৩৩ বাজে। ভাবলাম,এত রাতে কে টোকা দিল! তারপর মনে হলো, হয়ত গ্রামের কোন লোক রাস্তা দিয়ে যেতেই হাতের টোকা লেগেছে।তাই তেমন গুরুত্ব দিলাম না।
আর রাত যেহেতু অনেক হয়েছে তাই দেরি না করে ঘুমাবো বলে লাইট অফ করে দিলাম। কিছুক্ষনের মধ্যে চোখ ভার করে ঘুম চলে এসেছে প্রায়, এমন সময় আবার দু'টো টোকা।
এবারের টোকা গুলো আগের গুলোর চেয়ে জোড়ে হলো। ধরফর করে বিছানার উপর বসে পড়লাম।জোড়ে করে বললাম, "কে? "
কোন সাড়া পেলাম না।
হাতের কাছের বেড সুইচ টা দিয়ে আলো জ্বালালাম।আলো জ্বালানোর সাথে সাথে জানালার পাশ থেকে কে যেন বিলের দিকে প্রথমে আস্তে পরে জোড়ে হেটে চলে গেলো।পায়ের শব্দ পেলাম না কিন্তু সুর তোলা নুপুরের আওয়াজ বলে দিল সব। আমি ভয়ে ভয়ে জানালা খুললাম। কিন্তু কই? কেউ নেই তো। ঘরের টিউবলাইটের সাদা আলো জানালার ফাঁক গলে রাস্তার উপর পড়েছে। সেখানে শীতের কুয়াশা ছাড়া আর কিছু নেই।
কি আর করা,জানালা বন্ধ করে আবার শুয়ে পড়লাম।আর মনে মনে নিজের বোকামির কথা ভেবে নিজেই লজ্জা পেলাম। সকালে উঠে কাউকেই কিছু বললাম না। শেষে সবাই এ নিয়ে হাসাহাসি করে! মনকে বুঝালাম,
দূর, ভূত টুত কিছু না! সব মনের ভ্রম।
কিন্তু আমার সেই ভ্রম ভাঙলো ২য় দিন।
সেদিনও আমি পড়ালেখা শেষ করে সাড়ে বারোটা নাগাদ বিছানায় শুলাম।মেসের অন্যরা অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু আমার চোখে তখনো ঘুম আসেনি।আমি পুরোপুরি সজাগ।এমনকি ফোনে আমার ঢাকার এক বান্ধবির সাথে চ্যাট করছিলাম। কিন্তু হঠাৎ আবারো জানালায় জোড়ে জোড়ে দু'টো টোকা পড়লো।
আকষ্মিক এ শব্দে আমার বুক ধরফর ধরফর করে উঠলো।  আমি স্পষ্ট জানালায় টোকা দেয়ার শব্দ শুনতে পেলাম। বুকে একটু সাহস সঞ্চয় করে জিজ্ঞাসা করলাম, "
কে? কে ওখানে? "
কেউ কোন কথা বলল না, শুধু একটা মেয়েলি হাসি শুনতে পেলাম।তারপর কেউ নুপুর পায়ে দৌড়ে গেলে যেমন শব্দ হয়,তেমন একটা শব্দ।
আমার গা ছম ছম করে উঠলো।
আমি পাশের ঘরে গিয়ে আমার বন্ধু মিরাজকে ডেকে তুললাম। ওকে সব ঘটনা খুলে বলতেই বলল,"চল যাই,দেখি কে? "
দুজনে দরজা খুলে বাহিরে এলাম।নাহ! কেউ নেই। আরেকটু এগিয়ে পুকুর পারে চলে এলাম, নাহ! কোথাও কেউ নেই।
মিরাজ বলল, "নানাতো ভাই, এসব তোমার মনের ভুল।ওসব কিছুই না।"
যাই হোক, দু'জনে ঘরে ফিরে এলাম।সেদিন রাতে আর কোন আওয়াজও পেলাম না।
তারপর আরো দু'দিন গেল, কোন শব্দ টব্দ নেই। আর আমি ভাবলাম, আসলেই মনে হয় সব আমার মনের ভুল।
কিন্তু ৪র্থ দিনের দিন ঘটলো সবচেয়ে আশ্চার্য জনক ঘটনা।
সেদিন অবশ্য আমি আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ মাঝরাতে ঘুম কিছুটা পাতলা হয়ে এলো।
চোখ খুলতেই সারা ঘরে অন্যরকম এক আলো দেখতে পেলাম।তারপর মুহুর্তে ভ্যানিশ হয়ে গেল সব।
আর জানালার পাশে কেউ যেন নুপুর পায়ে হাসতে হাসতে বিলের দিকে চলে গেল।
আমি বুকে সাহস সঞ্চয় করে ধীরে ধীরে বাহিরের দরজা খুললাম। তারপর বারান্দা থেকে নিচে নেমে বিলের দিকে চলে যাওয়া রাস্তায় ফুচকি দিলাম।
একি! 
একটা মেয়ে সাদা স্যালোয়ার কামিজ পরে পুকুরের পারে দাড়িয়ে আছে। যেন,এখনি পুকুরের মধ্যে লাফিয়ে পড়বে।
আমি মেয়েটাকে দেখে ভাবলাম, হয়ত এলাকার কোন মেয়ে অভিমান করে আত্মহত্যা করতে এসেছে।তাই জোরে ডাক দিলাম,
"এই, কে রে ওখানে? "
আমি ডাক দিতে না দিতেই মেয়ে টা পুকুরে লাফিয়ে পড়লো!
একবার সেদিকে দৌড় দিয়েছি প্রায়! তারপর কি যেন মনে করে, মেসে এসে মিরাজকে ডাকলাম।মিরাজ কে সব বলতেই ও বলল, "ভালো করেছো যে,ওখানে যাও নাই। গেলে আর আজ তোমাকে বাঁচানো যেত না।"
তারপর মিরাজ বলল, অনেক বছর আগে নাকি একটা মেয়ে ওই পুকুরে ডুবে আত্মহত্যা করেছিলো। আর তারপর থেকে তার এই আত্মাকে অনেকেই দেখতে পায়।
সব শুনে আমার আত্মারাম খাঁচা ছাড়া।আর সাতদিন প্রচন্ড জ্বর!
Nilkanto( নীলকান্ত)